বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা

অর্থ লেনদেনের খবর বানোয়াট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি বলেছে, দলের ৮ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার’। গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার  মোশাররফ হোসেন            এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সরকারের একটা নীলনকশা, মিথ্যা প্রচার, অবান্তর ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসবের উদ্দেশ্য একটাই— বিএনপিকে বাইরে রেখে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি খেলা সরকার খেলতে চায়। আমরা এহেন অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে সরকারকে এ রকম কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানাচ্ছি।’ গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ টেনে ড. মোশাররফ বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদে দেখলাম আমার অ্যাকাউন্ট বলা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে। আমি আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাতে চাই, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সদস্যের কখনো কোনো সময় অ্যাকাউন্ট ছিল না, বর্তমানেও নেই। এটা থেকে বোঝা যায়- এটি কত বানোয়াট, কত মিথ্যা, কত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ। দুদকের কাছে আমার আহ্বান, যদি এই অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তাহলে কোন ব্যাংকে কোন ব্রাঞ্চে আছে, কত নম্বর অ্যাকাউন্ট তা বের করে কোন তারিখে আমি অ্যাকাউন্ট খুলেছি তা দেখুন এবং ওই অ্যাকাউন্টে স্থিতি কত আছে, কত টাকা ওঠানো হয়েছে সেগুলো দয়া করে আপনারা (দুদক) প্রকাশ করুন।’

তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমাদের নেত্রী ঘোষণা করে গেছেন আমরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগবে। এটা করতে হলে এ জন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সংসদ ভাঙতে হবে, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী  মোতায়েন করতে হবে- এই আন্দোলনের আমরা আছি। এই আন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে, জনগণ এটাকে সমর্থন করছে, বিদেশে সমর্থন বাড়ছে- তখন জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে এই ষড়যন্ত্রের খেলায় নেমেছে সরকার। আমরা বলতে চাই,  সেই খেলা এ দেশের মানুষ আর করতে দেবে না, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নাটক এ দেশের জনগণ আর করতে  দেবে না।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যে ৭ কোটি  টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়েছে সে পরিমাণ টাকা সারাজীবনেও লেনদেন করিনি। এটি এক ধরনের নোংরা রসিকতা বলে আমি মনে করি। কোনো মানুষ কারও সম্মানহানির আগে একশবার চিন্তা করে। সরকার হুকুম করেছে— এই লোকগুলো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, এদের বিরত করো, এদের ভয় দেখাও, এদের থামাও।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রই কেবল নয়, এটা একদলীয় শাসন প্রবর্তনের অংশ হিসেবেই সরকার এসব করছে। দুর্নীতি ও দেশের আর্থিক খাতে সরকারের চরম ব্যর্থতার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতেই এই মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বাংলা ইনসাইডারের মতো আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল করেছে মিথ্যা নিউজ প্রচারের জন্য। ইতিমধ্যে প্রতিনিয়ত এই মিথ্যা অপপ্রচার আপনারা দেখতে পারছেন। আগামীতে এরকম মিথ্যাচার আরও দেখবেন।’ ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি লেনদেন হতেই পারে। সংবাদটিতে দেখলাম আমার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের নাম দেওয়া হয়েছে যেখানে আমার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। এই সংবাদ ও অভিযোগ সম্পূর্ণ মনগড়া। কেন এই সংবাদ করা হলো, কোথায় থেকে এর উৎপত্তি— এটা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলতে চাই, জনগণের পয়সা ও জনগণের কল্যাণে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দয়া করে জনগণকে হেনস্তা করবেন না। এই হেনস্তার জন্য, দেশকে ধ্বংসের জন্য আপনাদের এক দিন এর দায় নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর