বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর সরকার

শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা স্বস্তিতে

আকতারুজ্জামান

কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সব নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাপিয়ে বেশিরভাগ পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ধ্বংসের এ মরণ খেলা বন্ধ করতে হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, যেসব পদক্ষেপ মানুষের পক্ষে নেওয়া সম্ভব তার সবই নেওয়া হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারাও এক ধরনের সন্ত্রাসী। এই প্রশ্ন সন্ত্রাসীদের জঙ্গিদের মতো করেই নিশ্চিহ্ন করা হবে। ফলে দেখা গেছে, সারা দেশের কোথাও গত দুই দিনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। আর প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় পরীক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো আলামত পেলেই হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। আর পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কড়া নজরদারি রেখেছে প্রশাসন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশ্ন ফাঁসের প্রচারণাকারীদের শনাক্ত করছে। 

এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরিবহন, বিতরণসহ সব পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যে প্রশ্নের একাধিক সেট প্রণয়ন ও পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট কোড নির্ধারণ অন্যতম। সারা দেশের কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার দিন সকালে ট্রেজারি থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করতে হয়েছে। ট্রেজারির নিকটবর্তী কেন্দ্রগুলোতে মাত্র আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন সংগ্রহ করা হয়। আর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরে সেট কোড ব্যবহারের নির্দেশনার এসএমএস যাওয়ার পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে পারছেন শিক্ষকরা। প্রশ্নপত্রের সব প্যাকেট থাকছে সিকিউরিটি টেপে মোড়ানো। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রে সবার মোবাইল ফোন বা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ছবি তোলা যায় এমন মোবাইল ফোন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া এর আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ছিল। এ জন্য এবার বিজি প্রেসে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এখানেও কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারছেন না। সব মিলিয়েই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে রীতিমতো মহাযজ্ঞে নেমেছে সরকার। পরীক্ষা চলাকালীন যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন মনিটরিং করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানা পদক্ষেপ আর সবার সহযোগিতায় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়েছে। আমরা সবার অব্যাহত সহযোগিতা চাই।

গত দুই দিনের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ না আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে এসব পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মারুফ বিল্লাহ মাসুম জানান, প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি। এভাবেই কোনো রকম প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই যেন স্বস্তিতে পরীক্ষা দিতে পারি।

দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৯ হাজার ৮২৫ : গতকাল এইচএসসিতে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় গতকাল ৯ হাজার ৮২৫ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছে ৩৯ পরীক্ষার্থী। আজ আলিমে আরবি প্রথমপত্র ও আরবি সাহিত্য (বিজ্ঞান ও মুজাব্বিদ মাহির বিভাগ) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর