শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংস্কৃতিহীন জাতি বাঁচতে পারে না

---- সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

কথাসাহিত্যিক ও গবেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, সংস্কৃতির মধ্যেই জাতির শক্তি নিহিত রয়েছে। সংস্কৃতিহীন জাতিকে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ঝুলে থাকতে হবে। সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ অবলম্বনহীন। তাই মানুষের নিজের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে নিজের কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারে পয়লা বৈশাখ, বর্তমান পরিবর্তন ও পরিমার্জনের ধারা, ইতিহাস-ঐতিহ্য-কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যতের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের এই অধ্যাপক।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সময় প্রবহমান। এটি ঐতিহাসিক সত্য। যুগের পর যুগ আসে। একেকটিতে একটি পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সৃজনশীলতা, মননশীলতা, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

গ্রামের পরিবর্তনের চেয়ে শহরের পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ ও গবেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শহরের অর্থনীতি আর গ্রামের অর্থনীতি এক নয়। দুটোই পরিবর্তনশীল। তবে ধরন দুই রকম। কারণ শহরের সঙ্গে পুঁজিবাদের সম্পর্ক অনেক বেশি। তিনি বলেন, সংস্কৃতির পরিবর্তনটি খুব লক্ষণীয়। শহরে ব্যান্ড দলের সংখ্যাই বেশি। অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে এখনো ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গানের প্রচলন রয়েছে। এ ছাড়া মানুষের পোশাকেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকের চমক রেখে চলছে গ্রামের মানুষও। কারণ আমরা এখন চমক দেখাতেই বেশি ভালোবাসি।

করপোরেট বাণিজ্য বিস্তারের নানা দিক তুলে ধরে এই গবেষক বলেন, আগে নববর্ষে গ্রামে হালখাতা হতো। ধনী-দরিদ্র সবাই একই হালখাতায় গিয়ে বাতাসা খেতেন। একই মেলায় ঘুরে বেড়াতেন। আর এখন ধনীদের খাবারের জন্য দামি দামি অজস  রেস্টুরেন্ট, কেনাকাটার বুটিক শপ, শপিং মল রয়েছে। এতে একটু বৈষম্য হচ্ছে বৈকি। যদিও সবাই লাল-সাদা রঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান, উৎসবে মেতে ওঠেন এটিই অনেক বড় বিষয়।

পয়লা বৈশাখে লাল-সাদা রঙের ব্যবহারের বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটি কোনো বাণিজ্যিক রং নয়। এটি আমাদের প্রকৃতির রং। নববর্ষের লাল সূর্য আর ভোরের সাদা আকাশের রঙের সঙ্গে মিল রেখে বাঙালির বর্ষবরণের রং নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংস্কৃতিকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম পড়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গেছে। আমাদের সময় ছিল পড়ার সংস্কৃতি। আর এখন হচ্ছে ইন্টারনেট, ফেসবুক, সেলফির সংস্কৃতি। যে যত সেলফি দিতে পারে সেই নিজেকে তত বড় মনে করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের বাইরে বিভিন্ন সংস্কৃতি। তিনি বলেন, ছেলেদের বিভিন্ন চুলের ছাঁট দেখে আমি আঁতকে উঠি। আমাদের সময় হলে বাবা-মায়েরা মেরে তক্তা বানিয়ে দিত। আর এখন বাবা-মাই ছেলেদের মাথার চুলে এসব ছাঁট দিয়ে আনেন। তবে এখনো কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হাসন, লালন চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি প্রশংসার দিক।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আশার কথা, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটেছে। ধর্মের নামে হানাহানি নেই। আমাদের দিন শেষের দিকে। তরুণরাই সব। তাদের প্রতি আহ্বান, সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে যাও। কারণ সংস্কৃতি ছাড়া জাতি বাঁচতে পারে না। গুরু সদয় দত্ত বলেছিলেন, ‘যদি বিশ্বমানব হতে চাস, কায়মনে বাঙালি হ।’ তাই আগে বাঙালি হও। নববর্ষে এটাই আমার প্রত্যাশা।

সর্বশেষ খবর