মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
গ্যাঁড়াকলে জোট মহাজোট

নামসর্বস্বদের চাহিদায় কান দেবে না বিএনপি

বি চৌধুরী কামাল কাদের সিদ্দিকী রব মান্নাকে টানতে পারে, জামায়াতের সঙ্গেও সমঝোতার চিন্তা

মাহমুদ আজহার

নামসর্বস্বদের চাহিদায় কান দেবে না বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চরম সংকটে রয়েছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকটি নাম ও প্যাডসর্বস্ব দলের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে অতিষ্ঠ দলটি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত, তখনই খণ্ড বিখণ্ড এসব দল বিএনপির ঘাড়ে জেকে বসেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়ে তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে একাদশ নির্বাচনে চাওয়া পাওয়া। জোটের পক্ষ থেকেই অন্তত ২০০ আসন দাবি করা হয়েছে বিএনপির কাছে। অবশ্য পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি। দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোনো কিছুই ভাবছেন না তারা। বিএনপি প্রধানের মুক্তির পর তাকে নিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার কথাই ভাবছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের বাইরেও বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ করছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে এসব দলের নেতারা তাকে দেখতে যান। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এটা শুধু মহাসচিবের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল না, সেখানে একটি রাজনৈতিক বার্তাও ছিল। জানা যায়, জোটের বাইরে সরকারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে নাগরিক ঐক্যই বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। অন্য দলগুলো দুই দিকেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিএনপির সঙ্গে জোট করবেন কি না জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা বলার সময় এখনো হয়নি। আমরা যুক্তফ্রন্ট করেছি। সেখানে বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য রয়েছে। আরও কয়েকটি দল আশা করি শিগগিরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য যুক্তফ্রন্টকে শক্তিশালী করা। অন্য কোনো দল বা জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে যাব কি না তা সময়মতো সিদ্ধান্ত নেব।’ দলের আরেকটি সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটকেও খাটো করে দেখছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে জোটের অধিকাংশ দলই মাঠে ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপি তা স্বীকারও করে। তবে কয়েকটি ছোট ছোট দলের চাওয়া পাওয়াকে ‘বেশি বেশি’ বলে মনে করছে দলটি। জোটকে সর্বোচ্চ ২৫-৩০টি আসন ছাড় দিতেও চায় বিএনপি। তবে জামায়াতসহ আরও দুই একটি দলকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। জামায়াতকে বেশ কিছু আসন ছাড় দেবে দলটি। এক্ষেত্রে জোটের বাইরে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আসা দলগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গেও এক ধরনের সমঝোতা করছে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমাদের কাছে এখন মুখ্য বিষয় হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর বাইরে তেমন কিছু্ ভাবনা নেই দলের। আসন বন্টন নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। এ বিষয়টি আমরা সময়মতো দেখব।’ জোট সম্প্রসারণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী অন্য সব দলের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। অনেকেই ইতিবাচকভাবে সাড়াও দিচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তিও গণতন্ত্র রক্ষায় যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনা রয়েছে।’ জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ১০টি দলের। অধিকাংশ দলই নাম ও প্যাডস্বর্বস্ব। এক নেতার এক দলই বেশি। নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য দূরে থাক, কোনো কোনো দলের নেতাদের ওয়ার্ড কমিশনার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। তবুও তাদের আবদারের শেষ নেই। বিএনপির কাছে জোটের শরিক দলগুলো চায় অন্তত ২০০ আসন।  সম্প্রতি রাজধানীতে এলডিপির ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার সম্মেলনে জোটের শরিক নেতারা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে এখনই ফয়সালর দাবি তোলেন। ওই সম্মেলনে জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকলেও মূল দল বিএনপির কেউ ছিলেন না। এলডিপির সম্মেলনে দলটি বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এপ্রিলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টির সুরাহা চায়। তা না হলে ৩০০ আসনে ৬০০ প্রার্থী  দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এলডিপি। দলটির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘যারা যোগ্য, তাদের কাজ করতে বলেছি। আশা করি, বিএনপি, এলডিপি সভাপতিসহ নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে।’ তবে আজ বিকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন এলডিপি সভাপতি ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। জানা যায়, এ সংবাদ সম্মেলনে এলডিপি আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে দলের অবস্থান আরও পরিষ্কার করবেন। জানা যায়, জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জামায়াত বিএনপির কাছে প্রায় অর্ধশত আসন চেয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপিকে নানাভাবে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। এ ব্যাপারে তারাও বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান চায় বলে জানা গেছে। জোটে নতুন অন্তর্ভুক্ত জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। এখনো নিবন্ধন হয়নি দলটির। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জানান, তাদের দলে ১৩ জন সাবেক এমপি রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে ৫০ জনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া ছোটখাটো অন্য দলগুলোও ১০ থেকে ২০টি করে আসন দাবি করছে।

সর্বশেষ খবর