মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাশিয়ার হুঁশিয়ারি, ফের হামলা হলে বৈশ্বিক গোলযোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

রাশিয়ার হুঁশিয়ারি, ফের হামলা হলে বৈশ্বিক গোলযোগ

সিরিয়ায় মার্কিন জোটের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এক দিন পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফের সিরিয়ায় হামলা হলে ‘বৈশ্বিক গোলযোগ’ শুরু হবে। এদিকে হামলার পর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তবে সাইবার হামলার আশঙ্কায় তটস্থ রয়েছে ব্রিটেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন। বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে নিজের নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরদিন রবিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোন আলাপে রুশ প্রেসিডেন্ট পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অবশ্যই তা আন্তর্জাতিক পরিসরে গোলযোগ তৈরি করবে। ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের হামলা সিরিয়ায় সাত বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের অবসানে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ ব্যাপারে পুতিন ও রুহানি একমত হয়েছেন।

বাসারকে উত্খাতের অভিপ্রায় নেই : এদিকে হামলায় অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন দেশই এখন বলছে, তাদের এ হামলার পেছনে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উত্খাত বা দেশটির গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিপ্রায় তাদের ছিল না। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বিবিসিকে বলেছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোর আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেই। তবে দামেস্ক ফের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে করণীয় নিয়ে ভাববে তারা। এটা সরকারের পরিবর্তনের জন্য নয়, এটা সিরিয়ায় সংঘাতের ধারা পরিবর্তনের চেষ্টা নয়।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি বলেছেন, সম্পর্ক ‘খুবই নাজুক’। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সম্পর্কোন্নয়নের আশা করছে। হেলি বলেন, লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি লক্ষ্য রয়েছে যেমন, কোনোভাবে যেন রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার না হয়, ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করা ও ইরানের কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি চালানো। এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির এরমাকোভ বলেছেন, হামলার পর কৌশলগত স্থিতিশীলতা নিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে ওয়াশিংটন।

ফুরফুরে মেজাজে আসাদ : রুশ পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্ধৃত করে দেশটির বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বাশার আল আসাদ ‘ফুরফুরে মেজাজে’ আছেন। পশ্চিমাদের হামলা প্রতিহতে ব্যবহূত সোভিয়েত আমলের এয়ার ডিফেন্সের কার্যকারিতার প্রশংসা করেছেন তিনি। রাশিয়া সফরের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেছেন। সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দৌমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মস্কো বলছে, রুশবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে ওই নাটক সাজিয়েছে যুক্তরাজ্য।

তটস্থ ব্রিটেন : টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেল, মিররসহ ব্রিটেনের অনেক শীর্ষ দৈনিকে গতকাল প্রধান খবর হিসেবে বেরিয়েছে, ‘রাশিয়ার সাইবার যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটেনজুড়ে আতঙ্ক’। লন্ডনের টেলিগ্রাফের ব্যানার হেডিং হয়েছে— ‘ব্রিটেনের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া’। উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে টেলিগ্রাফ লিখেছে, শনিবার সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বেনামি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে ‘ভুয়া খবরের’ সরবরাহ ২০ গুণ বেড়ে গেছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা এগুলোকে সর্বাত্মক সাইবার যুদ্ধের আলামত হিসেবে বিবেচনা করছে। ডেইলি এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘ব্রিটিশ গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন বিমানবন্দর, রেল নেটওয়ার্ক, হাসপাতাল, পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ সাইবার হামলার প্রধান টার্গেট হতে পারে।’ শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল ক্লার্ককে উদ্ধৃত করে ডেইলি মিরর বলেছে, ‘বদলা নিতে রাশিয়া সামরিক পথ নেবে বলে মনে হয় না, কিন্তু সাইবার যুদ্ধের পথ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে এটা চোখে পড়তে পারে। এ হামলার শিকার সবাই হতে পারে। বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে, তা হলো মাঝ আকাশে ব্রিটিশ কোনো বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।’ গত মাসে ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল স্যার ক্রিস ডেভরেল হুঁশিয়ার করেছিলেন যে, বিমানবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা পঙ্গু করে দেওয়ার ক্ষমতা রাশিয়া অর্জন করেছে। ডেইলি মেল ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র উল্লেখ করে বলেছে, ‘ব্রিটিশ এমপি, মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লোকজনের বিরুদ্ধে বিব্রতকর তথ্য ছড়ানো নিয়ে সরকারের ভিতর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন রবিবার বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাইবার যুদ্ধের হুমকির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর