মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ভারতের যুব বিভাগের সচিব

তরুণদের হতাশ হওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে

জয়শ্রী ভাদুড়ী, নয়াদিল্লি (ভারত) থেকে ফিরে

তরুণদের হতাশ হওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে

‘বাংলাদেশ ও ভারতের তরুণদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে পরিবর্তন আনার চিন্তা করা যাবে না। তবে শুধু ফলাফল নয়, এর চেয়ে দক্ষতা অর্জনের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা তরুণদের পৌঁছে দেবে সাফল্যের শিখরে। দুই দেশেরই তরুণদের খুব দ্রুত হতাশ হওয়ার একটা প্রবণতা আছে বলে আমার মনে হয়। হতাশা ঝেড়ে ফেলে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানের আলোকে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-ভারতের তরুণদের বিষয়ে এসব কথা বলেন ভারতের ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সচিব ড. এ কে দুবে। তরুণদের বিষয়ে ভারতের পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তরুণদের জন্য আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। গ্রাম, উপজেলা, জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যায়ে আমরা কর্মসূচি চালু করেছি। এর মধ্য দিয়ে তরুণরা সচেতনতামূলক কাজ করছে। দক্ষতা অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। তারা সামাজিক সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা, স্বচ্ছতা, বয়স্ক মানুষের পরিচর্যা, মাদক প্রতিরোধ এ রকম বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করছে। আমরা মনে করছি তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। ইনস্টিটিউটের আওতায় তারা প্রশিক্ষিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী। এ জন্য রুটিনমাফিক পড়াশোনার বাইরে তরুণদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে আগ্রহ বাড়াতে হবে। রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ভারতীয় তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মূল কেন্দ্র। এখানে বেশ কয়েকটি বিষয়ে কোর্স চালু করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতের প্রতিটি রাজ্যেই তরুণদের প্রশিক্ষিত করার কার্যক্রম চলছে।’ ড. এ কে দুবে বলেন, ‘আমরা আমাদের কার্যক্রম আরও বড় করার চিন্তা করছি। এর আওতায় ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী পাঁচ বছরের মধ্যে এসব প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে। আমরা পর্যায়ক্রমে এর আওতা বাড়াব। এতে করে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে। আমরা তাদের জন্য দুটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেছি। ইলেকট্রনিক বিষয় এবং তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, গ্রামের বা প্রত্যন্ত এলাকার অনেক শিক্ষার্থীর ইংরেজি বলা ও বোঝার দক্ষতা কম থাকে। তাই তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা কোর্স পরিকল্পনা করছি। আমরা গবেষণা করে দেখেছি, এ বিষয় দুটি তরুণদের দক্ষতার পরিধি বাড়াবে। তরুণদের ইতিবাচক বিষয়ে চিন্তা করতে শেখাতে হবে, সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে হবে।’

তরুণদের কোন বিষয়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন—এমন প্রশ্নে ভারতের ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্স বিভাগের এই সচিব বলেন, ‘তরুণদের একাডেমিক বিষয়ে এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রায়োগিক বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। এতে করে তারা স্বনির্ভর হয়ে গড়ে উঠবে। বেকারত্ব এমনিতেই কমবে। এখন চাকরির বাজারে টিকে থাকতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুবই জরুরি। আমরা তরুণদের কাজের জায়গা তৈরির চেষ্টা করছি, তাদের প্রশিক্ষিত করছি। তিনটি বিভাগের আওতায় তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও দেখভালের কাজ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় এসব কর্মসূচি চলছে। তরুণদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, সেখান থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। এখনকার তরুণরা খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। এটা ঠিক নয়। হতাশ না হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা বৃদ্ধিতে সময় দিতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের তরুণদের দক্ষতা এবং মানসিক চিন্তার জায়গাটা খুব কাছাকাছি। যদি দক্ষতার জায়গায় কোনো কম-বেশি থাকে, তাহলে সেটা হয়তো নির্দিষ্ট কিছু জায়গা বা প্রত্যন্ত এলাকাভেদে হতে পারে। এ দুই দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যও একই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর