শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

হাসিনা-মোদি বৈঠক হবে এক ঘণ্টা

দৃষ্টি আজ শান্তিনিকেতনে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দুই দিনের সরকারি সফরে আজ কলকাতা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এ সফরে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। তিনি আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডিলিট) গ্রহণ করবেন। প্রতিবেশী দুই প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে শান্তিনিকেতনে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন এবং সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে শেখ হাসিনার এ সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক ঘণ্টা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনার আর কোনো অনুষ্ঠান সূচি নেই। সফরসূচি অনুসারে, বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকালে শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। তিনি স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় কলকাতায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তিনিকেতনে যাবেন। সেখানে বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রফেসর সবুজ কলি সেন শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত থাকবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করবেন। এ ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক থিয়েটার, প্রদর্শনী কক্ষ, বিশাল লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কবিষয়ক গ্রন্থ। এ ছাড়া ভবনের প্রবেশদ্বারে দুই প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এখান থেকে শেখ হাসিনা কলকাতা ফিরে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার আসানসোলে যাবেন। সেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের পর মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে নেতাজি সুভাষ বসু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাতে দেশে ফিরবেন।

হাসিনা-মোদি এক ঘণ্টার বৈঠক : পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি নিয়ে বৈঠকের সময় বাড়ানো হয়েছে শেষ মুহূর্তে। আগে এ সময় ৫০ মিনিট থাকলেও শেষ সময়ে এটি বাড়িয়ে এক ঘণ্টা করা হয়েছে। এ বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, বিশেষত বাস্তুচ্যুতদের ফেরাতে ভারতের কার্যকর সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, সেটি মোদির সঙ্গে আলোচনায় পুনর্ব্যক্ত করবেন তিনি। বৈঠকে মোদি চাইলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই বৈঠকে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কাজ চলছে, যা ক্রমশ প্রকাশ্য হবে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সচিব এবং গুণীজনরা তার সফরসঙ্গী হলেও সেই তালিকায় নেই পানিসম্পদ মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বাগড়ায় ২০১১ সালে খসড়া চূড়ান্ত হয়েও ঝুলে যায় তিস্তা। সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীও এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন, সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দেখা হবে।

সূচি নেই মমতার : সূত্রের খবর, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলকাতার রাজভবনে নৈশভোজে আপ্যায়িত করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রাজ্যের দুই শীর্ষ মন্ত্রী ভোজসভায় যাচ্ছেন বলে রাজভবনকে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজভবন কোনো সাড়া পায়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মমতা আসানসোল যাচ্ছেন না। এ খবর পাওয়ার পর তড়িঘড়ি নতুন আমন্ত্রণপত্র ছেপেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের আমন্ত্রণপত্রে শেখ হাসিনা, রাজ্যপাল ত্রিপাঠীর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর নাম ছিল। বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মমতার যোগ না দেওয়ার ‘আনুষ্ঠানিক’ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়াই তার নাম অতিথিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর অনানুষ্ঠানিক কারণ ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগ আছে। তবে আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, শান্তিনিকেতনে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি হবে একান্তে। দুই দেশের কোনো কর্মকর্তাও সেখানে থাকবেন না। তবে লিখিত সফরসূচির বাইরে আলোচনার কোনো স্তরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকরা। তাদের কথায়, তিস্তা থেকে রোহিঙ্গা দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ জড়িত। সে ক্ষেত্রে ছকের বাইরে গিয়ে মোদি-হাসিনার আলোচনায় মমতাকে ডেকে নেওয়া হবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।

৮০ জন সফরসঙ্গী : মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ৮০ জন সফরসঙ্গী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন— শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।  রাজনৈতিক ও বিশিষ্টজনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন— আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, দলীয় সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, মেরিনা জাহান কবিতা, পারভীন জাহান কল্পনা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল প্রমুখ। এ ছাড়া ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুনুর রশিদ, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি আবুল হাসেম খানসহ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সমাজের বিশিষ্টজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর