শিরোনাম
শনিবার, ২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুমকিতে পড়েছে শ্রমবাজার

নানামুখী প্রচারণায় ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরির চেষ্টা চলছে। মাহাথির সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি মহল এর বিপক্ষে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ জিটুজি প্লাসের আওতায় গত দুই বছর ধরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এর কারণে একদিকে সাধারণ শ্রমিকরা প্রতারণা থেকে নিস্তার পাচ্ছে অন্যদিকে একমাত্র বৈধভাবে নির্দিষ্টকাজ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। শুরু থেকে এ নিয়ে নানান কথা থাকলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য এখনো একটি ইতিবাচক অবস্থানে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থিরতা এখনো বহাল রয়েছে। মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতাকে সৌদি আরবে কাজে লাগানোর চেষ্টা চললেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি। কুয়েতে ভিসা বন্ধ অব্যাহত রয়েছে।

আরব আমিরাতে ঝামেলা কাটেনি। যুদ্ধের কারণে ইরাক, লিবিয়া ও ইরানের শ্রমবাজার শেষ হয়ে গেছে। এক সময় ইয়েমেনে প্রচুর গার্মেন্ট কর্মী গেলেও এখন সেখানেও বাংলাদেশিদের আর কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ব শ্রমবাজারের এই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নতুন করে চিন্তা করা দরকার বলে অনেকে মনে করেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় সংকট তৈরি হলে হুমকিতে পড়বে শ্রমবাজার। কারণ, বৈধ পথে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে গত দুই বছরে লক্ষাধিক শ্রমিক ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়া গেছেন। এই শ্রমিকদের নিয়ে সেখানে তেমন কোনো সমস্যার অভিযোগও আসেনি। বরং তারা কাজ করা ছাড়াও রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন দেশের জন্য। সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এভাবেই শ্রমশক্তি বিদেশে পাঠানো দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

জানা যায়, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সরকার পরিবর্তনের পরপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে জিটুজি প্লাস বিরোধীরা। অনলাইন ও অফলাইনে নানান মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা শুরু হয়। এর মধ্যে দেশটির মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী এম কুলাসেগারানের এক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকে ভিত্তি করে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার জিটুজি চুক্তি বাতিল হচ্ছে বলে অপপ্রচার শুরু হয়। আবার আসন্ন বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপের সভাকে কেন্দ্র করে বর্তমান পদ্ধতি বাতিলের জন্য শুরু হয় নানান তদবির। এর অংশ হিসেবে জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট মালয়েশিয়া প্রবাসীদের একটি অংশ থেকে ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বায়রাকে দেওয়া হয় স্মারকলিপি। অভিযোগ রয়েছে, এই সব অপতৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান। সঙ্গে আছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন মুকুল ও বাবুল। মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে ব্যবহার করে মকবুল হোসেন মুকুলের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে অডিও বার্তাও আছে অনলাইনে।

কিন্তু মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমের তথ্য মতে, দেশটির মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী এম কুলাসেগারান সেই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে কিছু বলেননি। তার বক্তব্য ছিল, সামগ্রিকভাবে বিদেশিদের বদলে মালয়েশিয়ার অধিবাসীদের বেশি বেশি কাজে লাগানোর বিষয়ে। সেদিন তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাইছে তাদের সরকার। আমরা মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের সবার আগে অগ্রাধিকার দেব। আগে ভাবব মালয়েশিয়ার মানুষের কথা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাবব অন্যদের কথা। আমরা বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাই। মন্ত্রী এও বলেছেন, মালয়েশিয়ায় যারা কাজ করছেন তাদের অবিলম্বে বাক্স-প্যাটরা গুটিয়ে চলে যেতে বলা হবে না। তারা এখানে আসার জন্য দেশ ছেড়েছেন। তাই আমরা যতটুকু পারি ততটুকু করব।

তবে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার আসায় শ্রমবাজার নিয়ে চিন্তিত নয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। চিন্তিত নন বাংলাদেশের সরকারও। এ বিষয়ে বায়রা মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতেও তিন দফায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নানান ধরনের অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বাজার উন্মোচন হয়েছে এবং তার অনুমোদনেই জিটুজি প্লাস প্রকল্প শুরু হয়েছে। এখন একটি বিশেষ মহল আবার এই বাজার বন্ধে তৎপর হয়ে উঠেছে। আর বাংলাদেশ এখন মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি। সেক্ষেত্রে কর্মী নেওয়া বন্ধ করতে হলে অন্যান্য দেশ থেকেও কর্মী নেওয়া বন্ধ করতে হবে তাদের। এ বিষয়ে বায়রার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেছেন, কোনো দেশে নতুন সরকার এলে পূর্বের সরকারের সময়ে করা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, তারা ওই চুক্তি থেকে সরে আসবে। নোমান বলেন, দেশটির চাহিদার আলোকেই পূর্বের সরকার তিন বছরে ১৫ লাখ লোক নেওয়ার কথা বলেছিল। এ সরকার  সেটাই বিবেচনা করবে। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের বিদেশি কর্মী লাগবে। সেক্ষেত্রে পর্যালোচনা করলেও কমিয়ে দেওয়া বা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের চাহিদা অনুযায়ীই  লোক যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেছেন, মালয়েশিয়ার নতুন সরকার কী ভাবছে আমরা এখনো জানি না। আমরা অপেক্ষা করছি উভয়  দেশের সমন্বয়ে জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপের সভার। সচিব বলেন, জিটুজি পদ্ধতি শুরুর সময়ই ৭৫০টির বেশি বৈধ এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। মালয়েশিয়া সরকারই ১০ এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছে। বায়রার সাবেক সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেছেন, বাংলাদেশের হাজার হাজার এজেন্সি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। অতীতে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনতেই নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে অন্য কাউকে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দিতে চায় না মালয়েশিয়ার সরকার।

বাড়ছে নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় : মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় সরকারি খাতায় ৩৭ হাজার টাকা নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এটি বিবেচনায় নিয়েই গত বছরের জুনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় নির্মাণ বা কারখানা শ্রমিকদের জন্য অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং কৃষিশ্রমিকের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণের জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়েছিল। আসন্ন বৈঠকেও এ বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর