প্রতিবেশী দেশ ভারত হলো বড় ভাইয়ের মতো অন্যদিকে চীনকে ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে তুলনা করেছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ইন্ডিয়ান ওমেনস প্রেস কর্পস (আইডব্লিউপিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন আলি।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার জানান ‘এই বিষয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্য সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। এই চুক্তি হলে আমরা খুবই খুশি হবো। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই চুক্তি সম্পাদিত হলে তার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না বলেও অভিমত দিয়েছেন তিনি।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও এই প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি অন্যদিকে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি— উভয়ের ওপরই জোর দিয়েছেন মোয়াজ্জেম আলি। এ সময় একটি উদাহরণ তুলে আলি জানান, যদি তাঁকে গাড়ি কিনে দেওয়ার মতো রুপি তাঁর ভাইয়ের কাছে না থাকে তবে ভাইকে ব্যাংকে গিয়ে রুপি ধার নিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজার কখনোই ভাই হবে না।
সাম্প্রতিক কালে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের উষ্ণতার খবরে ভারতের উদ্বেগ নিয়েই আলি এই মন্তব্য করেন। তাঁর অভিমত ঢাকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ।
আলি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু আমরা কোনো ঋণের ফাঁদে পড়তে চাই না। চীন আমাদেরকে ‘লাইন অব ক্রেডিট’এ রুপি দিয়েছে, কিন্তু সেটা বিনামূল্যে নয়। আমাদেরকে সেটা ফেরত দিতে হবে’। আলি এও স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিশ্বব্যাংক কিংবা চীন, ভারত বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কাছে বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি করেনি।
আলি এও জানান যে, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেব ক্ষেত্রেই লাইন অব ক্রেডিট মনোনীত করেছে যেখানে তাদের সুবিধা রয়েছে। তিনি জানান, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু ভারতের সঙ্গে যে ধরনের প্রজেক্ট বিরাজমান, সেসব ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই’।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীন বাঁধ নির্মাণ করেছে বলে যে খবর পাওয়া গেছে তা নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বাংলাদেশি কূটনীতিক। এ দিন সে সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে আলি বলেন ‘ব্রহ্মপুত্র বেসিনে পানির গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন এবং জয়েন্ট বেসিন ম্যানেজমেন্ট ধারণাটিতে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে। কারণ এর ফলে পানির কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ কোথা থেকে পানি উৎপত্তি হচ্ছে আর সমুদ্রের কোথায় গিয়ে পানি মিশছে— এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারব। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি আঞ্চলিক যৌথ এজেন্সিগুলোকে সব ধরনের সহায়তা করতে পেরে আমরা খুশি হবো’। উল্লেখ্য তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে। চীনের (ইয়ারলুঙ জাংবু নদ নামে পরিচিত) ভিতর দিয়ে ভারত হয়ে তা বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। এরপর তা গঙ্গা নদীতে মিশে পরে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।