শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাজেট বিশ্লেষণ

বন্ধ হচ্ছে ভুয়া জামানতে ঋণ নেওয়া

আর্থিক খাত সংস্কারে ১৩ উদ্যোগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রস্তাবিত বাজেটে ভুয়া জামানতে ঋণ নেওয়া বন্ধ করতে একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ তথ্য সংরক্ষণ করবে। এখান থেকে যে কেউ চাইলেই ঋণের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবেন। আগামী বছর থেকেই এটি কার্যকর হবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ভুয়া দলিলপত্র দেখিয়ে গত কয়েক বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে গেছে প্রতারক চক্র। এর মধ্যে অনেক টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। বেপরোয়া ঋণ দেওয়ার কারণে তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। কয়েকটি ব্যাংকে দেখা দিয়েছে মূলধন সংকট। তারল্যের অভাবে পুঁজিবাজারেও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠনের সুপারিশ ছিল বিভিন্ন মহলের। বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও এ ধরনের ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার ঘোষিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। তার বদলে আর্থিক খাতের সংস্কারে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বা হবে সে ধরনের ১৩টি উদ্যোগ উল্লেখ করা হয়েছে বাজেটে। এসব উদ্যোগকে ‘আর্থিক খাতের সংস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুয়া জামানতে ঋণ বন্ধ করার বিষয়ে একটি উদ্যোগে বলা হয়, ‘অনেক ক্ষেত্রে একই সম্পদ বা জমি জামানত দেখিয়ে ব্যাংক ঋণ অনিয়মিতভাবে নেওয়া হয়। এই জালিয়াতি রোধের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সব ঋণের বিপরীতে যে জামানত দেখানো হয় সে সম্বন্ধে একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করা হবে। যে কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এই তথ্য যাতে যাচাই-বাছাই করতে পারেন সে ব্যবস্থা আগামী বছরেই কার্যকরী হবে।’

আর্থিক খাতের সংস্কারে বাজেটে উল্লিখিত অন্য উদ্যোগগুলো হলো— ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদ/মুনাফা হার মাসে শুধু একবার পরিবর্তন করতে পারবে। পরিবর্তিত সুদ হার তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের স্ব স্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশে বাধ্যবাধকতা আরোপ, ঋণ এবং আমানতের গড় ভারিত সুদ হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা; কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ আবেদন ফি ২শ টাকায় সীমিত রাখা এবং মেয়াদ পূর্তিতে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোনো চার্জ আদায় না করা; পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়তা তহবিল পরিচালনা; বৃহৎ ঋণখেলাপি মনিটরিং এর জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার চালুকরণ; সুষ্ঠু এজেন্ট ব্যাংকিং এর নির্দেশনা সংবলিত গাউডলাইন জারি; মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে একক ব্যক্তি মোবাইল হিসাবের স্থিতি সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকায় নির্ধারণ; বীমা কোম্পানি/করপোরেশনসমূহে ইউনিফর্ম কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার) প্রোফাইল জারির নির্দেশনা; স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা প্রদান; ব্যাংকিং সেবা বিষয়ক অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহক সেবা সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; ব্যাংকের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা প্রদান এবং বৃহৎ ঋণগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ডাটাবেজ ফর লার্জ ক্রেডিট (সিডিএলসি) গঠন।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) পুনঃনির্ধারণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। এ ছাড়া ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে ‘সিস্টেম ফেইলুর’ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ খবর