শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করি

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করি

মাহে রমজান বরকতময় মাস। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশক আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত হাসিলের সময় এবং ইতিকাফের দশক। অপর দিকে  শবেকদর হওয়ার একটা বিশেষ সম্ভাবনাময় রাতও এর মধ্যে বিদ্যমান। তাই শবেকদর তালাশ করার কথা হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে।

হজরত আনাছ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন— তোমাদের মধ্যে রমজান মাস এসেছে। এর মধ্যে একটা রাত আছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হলো সে তো সব কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত হয়ে গেল। বঞ্চিত হতভাগা ছাড়া এই রাতের কল্যাণ থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না।  (ইবনে মাজাহ) মৌলিকভাবে শবেকদর এমন এক রাত। যে রাতে ইবাদত করে জীবন গঠন করা যায়। লাগামহীন জীবনের লাগাম টেনে পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করার রাত। আমরা অনেকে বস্তুসমূহের পরিশুদ্ধতা ভালো বুঝে পরিবেশ পরিশুদ্ধ করি। খাবার বস্তুসমূহ পরিশুদ্ধ করি। এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনকেও পরিশুদ্ধ করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। আমার যদি জীবনটাই অপরিশুদ্ধ থাকে, তাহলে সব কলাণ থেকে আমরা বঞ্চিত থাকব। দেখুন! রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মদিনার জীবন ছিল শান্তিময়। নবীজি এখানে এসেই এক অতুলনীয় জীবনযাপন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করলেন। মদিনার আনসার ও মক্কার মোহাজেরগণ মিলে নবীজির শান্তির মিছিলে শরিক হলেন। নবীজির আদর্শে গঠন করলেন পবিত্র ও পরিশুদ্ধ জীবন। মক্কায় মোহাজেরগণ ছেড়ে আসলেন পৈতৃক বসতভিটা। আনসাররা মোহাজের ভাইদের জন্য ছেড়ে দিলেন নিজেদের সম্পদের অর্ধেক। পরিশুদ্ধ ও ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছিলেন যার দৃষ্টান্ত দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। ফলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের শুভ সংবাদ লাভ করেছিলেন, নবীজির আদর্শে আদর্শবান হয়ে পরবর্তীতে আগত লোকদের জন্য প্রাত্যহিক কর্ম বা আচরণের মধ্য দিয়ে সব মানুষের অনুসরণযোগ্য একটি আদর্শ রেখে গিয়েছেন। হজরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানরত কোরাইশ ও সবার জন্য মঙ্গল করতে চেয়েছিলেন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও তিনি কখনো কারও ক্ষতি করেননি। নবুওয়াত প্রাপ্তির পর কোনো প্রাণীর ক্ষতি করার প্রশ্নই আসে না। সেখানেও তিনি একটি পরিশুদ্ধ ও সুন্দর জীবনের দিকে সবাইকে আহ্বান করেছিলেন। তিনি সবাইকে আহ্বান করেছিলেন— ‘সকলে বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাহলে সফলতা পাবে’। মঙ্গলকামী নবীজি তাদের থেকে পেলেন কষ্ট আর কষ্ট। এক সময় নবীজিকে স্বীয় মাতৃভূমি পর্যন্ত ত্যাগ করতে হলো। এক কালিমার দাওয়াত দেওয়ার কারণে তিনি এক ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন। এই ধরনের সমূহ বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে তিনি আরবজাতিকে এক কালিমার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করার তালিম দিয়েছিলেন। আরবজাতিও এক সময় প্রিয় নবীজির পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন শিক্ষা গ্রহণ করে দলে দলে ইসলামে দাখিল হয়েছিলেন। যার নমুনা মক্কা বিজয়ের সময় দেখা গিয়েছিল। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর বিজয় ও সাহায্য এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাকারী’। (সূরা নাসর) আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র শবেকদর তালাশ করে ইবাদত ও আনুগত্যতার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর