শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
রাজশাহী সিটি

আওয়ামী লীগের দখলে মাঠ, বিএনপি ঢিমেতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জুলাই। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে মাঠে আছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে মাঠে আছেন। আর কর্মীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

তবে  প্রার্থিতা নিশ্চিত থাকলেও নানা সংকটে মাঠে নামতে পারেননি বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যেখানে দাপট দেখিয়ে চলেছেন, সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে আছে। দলের নেতারা বলছেন, তাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নগরীজুড়ে হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। মাঝে দুই দিন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একাই প্রচারে নেমেছিলেন। কিন্তু তাকে আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বুলবুলের ব্যানার-ফেস্টুনও সেভাবে চোখে পড়েনি। তার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তার (বুলবুল) ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সরিয়ে ফেলেছে। নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার একক নির্বাচনই হচ্ছে। একটি দলেরই ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ছে বেশি। আবার তাদেরই প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা নজরে আসছে না।’ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘অপপ্রচারের কারণে রাজশাহীর মানুষ গতবার ভুল করেছে। এবার সেই ভুল যেন না হয়, সে কারণে আমরা আগে থেকেই সাবেক মেয়র লিটনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামি। আগামীতে তিনি মেয়র হলে রাজশাহীবাসী কী কী উপকার পাবে, কী কী উন্নয়ন হবে, সেটিও তুলে ধরছি। পাঁচ বছরে রাজশাহী নগরবাসী কী কী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেটিও আমরা তুলে ধরছি।’

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকতে পেয়ে আমি এক বছর থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মহল্লা কমিটিও করা হয়েছে নির্বাচন উপলক্ষে। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এখনো নানা কর্মসূচি চলছে। আশা করি জনগণ এবার আর ভুল করবে না। উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে জনগণ আমাকেই এবার মেয়র নির্বাচিত করবে।’

এদিকে, বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের নগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি। ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটি ঘোষণার পর নগর বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, তালা দেওয়াসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ফলে কয়েক দিনের মাথায় শুধু সভাপতি-সম্পাদককে রেখে বাকি পদগুলো স্থগিত করা হয়। নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ওয়ালিউল হক রানা জানান, ‘প্রতিপক্ষ এমনভাবে মাঠ দখল করে আছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা বিজয়ী হয়ে গেছে। শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। ফলাফল আগে থেকে নির্ধারিত থাকলে মানুষ ভোট দিয়ে ফল পাবে না। খুলনার মতো নির্বাচন রাজশাহীতে হতে দেওয়া হবে না। আমরাও প্রস্তুত আছি। জনগণ যদি স্বাধীনভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, তাহলে বিএনপির প্রার্থীই বিজয়ী হবেন।’

তবে নগর বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামবে কীভাবে, কারও তো পদই নেই। জনগণের কাছে তারা নিজেদের কী পরিচয় তুলে ধরবে? নেতা-কর্মীরা মাঠে নামছে না অনেকটা ক্ষোভ থেকেই। ফলে ঝিমিয়ে পড়ছে দলের কর্মী-সমর্থকরাও।’ নগর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘নগরীর উন্নয়নে কাজ করেছি। কিন্তু এখন ক্ষমতাসীনরা প্রচারণার ব্যানার পর্যন্ত টানাতে দিচ্ছে না। খুলনায় যেভাবে ভোট ডাকাতি হলো, এখানেও তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। আমাদের তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। আমার ব্যানার, পোস্টারগুলোও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলেও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর