সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তদন্ত চলছে আমীর খসরুর বিরুদ্ধে নওমিকে আটক

বিশেষ প্রতিনিধি

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিলহানুর রহমান নওমি নামে এক ব্যক্তির কথোপকথন ভাইরাল হয়। মানুষজনকে ঢাকার রাস্তায় নামতে বলার এই অডিও ভাইরাল হওয়ার পর শনিবার রাত পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলার পর গোয়েন্দা পুলিশ নওমিকে কুমিল্লা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে বলে সূত্র জানিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা, কোথাও তার ইন্ধনে কোনো হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে কোথাও নাশকতার কোনো নির্দেশ দিয়েছেন কিনা সে সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনকে ঘিরে মডেল ও অভিনেত্রী নওশাবাসহ অন্য যারা ফেসবুকসহ ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের গুজব ছড়িয়েছেন তাদের সঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সুবিধা আদায়ের জন্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কোথাও কোনো ব্যক্তি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো গোপন বৈঠক করেছেন কিনা সে বিষয়টিও তদন্তে গুরুত্ব পেয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নেপথ্যে থেকে টাকা-পয়সা লগ্নি করছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সেই নাওমীকে কুমিল্লা থেকে আটক : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বিএনপি নেতা আমির খসরুর ফোনালাপের ঘটনায় কুমিল্লা থেকে মিলহানুর রহমান নাওমী (২৭) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল সকালে বরুড়া উপজেলার দেওড়া গ্রামের ফুফুর বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে আটক করা হয় বলে নাওমীর পারিবার জানিয়েছে। নাওমী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উনাইসার গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজের ছেলে। নাওমী লন্ডনে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন।

নাওমীর বাবা ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ জানান, গতকাল ভোরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নাওমীর খোঁজে তার উনাইসারের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সেখানে তাকে না পেয়ে তারা চলে যান। পরে তাকে তার ছোট বোনের (নাওমীর ফুফু) বাড়ি থেকে সকাল ৭টার দিকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

 তবে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

 প্রসঙ্গত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে একজনের অডিও ফোনালাপ ভাইরাল হয়ে যায়। অডিও ক্লিপটি আন্দোলনের সপ্তম দিন গত শনিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই অডিওতে নাওমীকে ঢাকায় আন্দোলনে সক্রিয় হতে বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নাশকতায় উসকানি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওই রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এরপর গতকাল সকালে তাকে আটক করা হয়।

সর্বশেষ খবর