১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সারা দেশে কারফিউ এবং সেনা তৎপরতার মুখে যখন টুঁ শব্দটি করার উপায় ছিল না, তখন হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে গর্জে উঠেছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধের দুঃসাহসিক ‘কাদেরিয়া বাহিনী’র প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ‘হত্যাকারী ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে’ সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দেন তিনি।
তার নেতৃত্বে সেই প্রতিরোধযুদ্ধে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ১৭ হাজার মুজিবভক্ত। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। তারা অস্ত্র হাতে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে কাঁপিয়ে তোলেন সীমান্তবর্তী জনপদ। মহাদেও থেকে রংপুরের চিলমারী পর্যন্ত সাতটি ফ্রন্টে বিভক্ত হয়ে চলে ভয়াবহ প্রতিরোধযুদ্ধ। এতে অংশ নেওয়া অন্তত ১০৪ জন মুজিবপ্রেমী নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন পাঁচ শতাধিক প্রতিরোধযোদ্ধা। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল-জুলুমের শিকার হন আরও তিন শতাধিক প্রতিবাদী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তজুড়ে ২২ মাস ধরে চলে এ প্রতিরোধযুদ্ধ। জাতির পিতাকে হারানোর শোকে মুহ্যমান একেকজন বীরযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন গেরিলাযুদ্ধে। গারো পাহাড়ঘেঁষা ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা জেলা ও সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত সীমান্তের বিরাট এলাকাজুড়ে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন তারা। সশস্ত্র আক্রমণের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী পাঁচটি বিডিআর ক্যাম্প ও দুটি থানা দখল করে প্রায় ৩০০ বর্গমাইল এলাকা নিজেদের কবজায় নেন প্রতিরোধযোদ্ধারা। আজ অনেকেই অশ্রু, কান্না, শোকে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করলেও পঁচাত্তরে বাঘা সিদ্দিকীর মতো আর কেউ গর্জে ওঠেননি, অস্ত্রহাতে নেতৃত্ব দিয়ে কেউ নামেননি প্রতিরোধে। ওই সময় সেনা-বিডিআর-পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের বিবরণ বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও গুরুত্ব পায়। ১৯৭৬ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ‘কংশ নদের উত্তরাংশের ৩০০ বর্গমাইল এলাকা বাঘা বাহিনীর দখলে। শেখ মুজিব হত্যার প্রতিরোধ চলছে’।