মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভুয়া ছবির জন্য ক্ষমা চাইল মিয়ানমার সেনাবাহিনী

প্রতিদিন ডেস্ক

ভুয়া ছবির জন্য ক্ষমা চাইল মিয়ানমার সেনাবাহিনী

রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে একাধিক ভুয়া ছবি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সাধারণত ক্ষমা চাওয়ার কোনো রেওয়াজ নেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। কিন্তু জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনে দেশটি যে চাপে পড়েছে, সেনাবাহিনীর ক্ষমা চাওয়া তার বহিঃপ্রকাশ। মূলত রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের চেষ্টা চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপত্র ‘দ্য মিয়াওয়াদি ডেইলি’ গতকাল ‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো : পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটিতে প্রকাশিত দুটি ছবির জন্য ক্ষমা চেয়েছে। গত ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে মিয়ানমারের জেনারেলদের গণহত্যা হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বইতে ইতিহাসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপত্র মিয়াওয়াদি ডেইলিতে গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ভুলের জন্য পাঠক এবং ওই ছবি দুটির আলোকচিত্রীদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।’ রোহিঙ্গা সংকটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত জুলাই মাসে বইটি প্রকাশ করে, যেখানে অন্য দেশের পুরনো দুটি ছবি ব্যবহার করে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আরেকটি ছবির ক্যাপশনে দেওয়া হয় ভুয়া তথ্য। ওই বইয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভুয়া ছবি ছেপে দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে গত শুক্রবার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে ওই বইয়ে ১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে। ছবির বিবরণে বর্মি ভাষায় বোঝানো হয়েছে- রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ হত্যার ছবি। খোঁজ করতে গিয়ে রয়টার্স দেখতে পায়, ওই ছবি আসলে তোলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, যখন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ঝাপসা হয়ে আসা আরেকটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ গাঁট্টি-বোচকা নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে কোথাও যাচ্ছে। তার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মিয়ানমারের দক্ষিণ অংশ দখল করে নেওয়ার পর বাঙালিরা এদেশে প্রবেশ করে।’ কিন্তু রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডায় তোলা একটি রঙিন ছবিকে বিকৃত করেই সেনাবাহিনীর বইয়ের ওই ছবি তৈরি হয়েছে। বইয়ের মুখবন্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিয়াও চিয়াও ও লিখেছেন, রাখাইনে ‘বাঙালিদের ইতিহাস প্রকাশ্যে আনতেই’ তারা ‘প্রামাণ্য ছবিসহ’ এই সংকলনটি প্রকাশ করেছেন। অথচ সেই ছবিই ভুয়া।

দুই সাংবাদিকের জেল : মিয়ানমার সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের দেশের রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলার এই রায় দেওয়া হয়। এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ওর-কে গত ১২ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।

 দুই সাংবাদিককে মুক্তি দিতে আন্তর্জাতিক আহ্বানের মধ্যেই ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালত গতকাল এই রায় ঘোষণা করে।  বরাবরই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসা এই দুই সাংবাদিক মামলার বিচারের সময় আদালতকে বলেছিলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের এক রেস্তোরাঁয় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে দুই পুলিশ সদস্য তাদের হাতে কিছু মোড়ানো কাগজ ধরিয়ে দেন এবং তার পরপরই সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রায়ের পর ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমার যে গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে এসেছে এবং বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এ ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।’ পাশাপাশি দুই সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তিও দাবি করেছে তারা। মিয়ানমারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রায়ে হতাশা জানিয়ে বলেছেন, একটি দেশের গণতন্ত্র বজায় রাখতে আইনের শাসন এবং বাক-স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই রায়ে তার কোনো প্রতিফলনই হয়নি।’ জাতিসংঘও হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, ‘কোনো দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই বলে দেয় দেশটি কতটা শান্তিপূর্ণ, সেখানকার বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি কতটা ভালো।

সর্বশেষ খবর