শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এস কে সিনহাকে অপমানকারীদের হবে বিচার : কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণফোরাম সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে যারা অপমান করেছেন তারা সভ্য মানুষ নন— অসভ্য। তাদের বিচার এক দিন হবেই। খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারে আদালত স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেসামরিক সময়ে তথাকথিত জেলখানায় আদালত বসানো কাঙ্ক্ষিত নয়। জেলের ভিতরে এত নাটক কেন? গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারের অডিটরিয়ামে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ২০০৭ সালে ২৩টি শর্ত দিয়েছিলেন। সেগুলো এখনো প্রযোজ্য। তিনি এখন সেগুলো সমর্থন করেন কিনা? জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা আইনের শাসন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে ড. কামালের কাছে প্রশ্ন করেন। তিনি জবাব দেন। আইনজীবীদের মধ্যে প্রশ্ন করেন আবেদ রাজা, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, শরীফ ইউ আহমেদ, মনির হোসেন, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, এমাদুল হক বশির, হুমায়ুন কবির মঞ্জু, হেমায়েত উদ্দিন বাদশা প্রমুখ। ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার দেওয়া শর্তগুলো এখনো প্রযোজ্য হতো, যদি তিনি বর্তমানে বিরোধী দলে থাকতেন। বিরোধী দলে থেকে যখন শর্তগুলো সমর্থন করেছিলেন, আশা করি, সরকারে থেকেও তিনি সমর্থন করবেন। লাইসেন্সধারী সরকার থেকে বেরিয়ে লাইসেন্সধারী সরকারের অধীনে যেতে আপনার ভূমিকা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক কিছুই সম্ভব হবে। তিনি বলেন, গত ৪৬ বছরে আমরা দেখেছি এদেশে কেউ টানা ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কেউ পারেনি, আমরা এটা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এত কিছু করে কী হবে? জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যায় কিনা? এক আইনজীবীর এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি আইন থাকে তাহলে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করা যায়। আইন না থাকলে যায় না। সরকার-বিরোধী প্লাটফরমের সফলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সফল হব। বিভেদে জড়িয়ে গেলে ব্যর্থ হব। সম্প্রতি আপনার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে আপনাকে পাওয়া যায় না, বিমানের টিকিট কেটে রাখেন, ক্রান্তিলগ্নে দেশের বাইরে চলে যান। এমন প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০০৭ সালে ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। এরপর ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছিল। সেটা দেশে থেকেই করেছিলাম। এসব ঘটনা না ঘটালে তো ২০০৮-এর নির্বাচন হতো না। আর হলেও এই ফলাফলও হতো না, যদি ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল না হতো। সর্বোপরি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে যখন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান থেকে সরালাম, তখন আমাদের চারজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা হলো। এরপর ২০১০ সালে সে মামলা থেকে আমরা মুক্ত হলাম। এসব প্রেক্ষাপটেও তো আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাইনি।

প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন সম্ভব কিনা? এমন প্রশ্নে গণফোরাম সভাপতি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীকে তো নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া যায় না। ইতিপূর্বে কী পটভূমিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল আপনারা সবাই জানেন। সুষ্ঠু নির্বাচনে যাতে প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব না করে সেজন্যই এসেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারকে তো নিরপেক্ষ থাকতে হবে। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র দরকার, নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্র হলে চলবে না।

দশম সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের কার্যক্রম বৈধ কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালতে যাওয়া যেতে পারে। আমি জানি কেন কেউ এ নিয়ে আদালতে যায় না? তাই জনমত গঠন করতে হবে। তারপর কোর্টে আসতে হবে। দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলেছিলেন। তারপর আর নির্বাচন দেননি। আপনারা এতদিন চুপ থাকলেন কেন? এমন প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা কেন এতদিন চুপ থাকলাম এ প্রশ্ন তো করাই যায়। ওই লেভেলের কেউ যদি কথা না রাখে তাহলে তো দুঃখজনক। ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানের ৪৬ বছর পর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সংবিধানের কিছু সংশোধনী করা দরকার। এর মধ্যে কিছু ঘাটতি আছে, সেগুলো কীভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, সেগুলো লিখিত আকারে আপনারা দিন। তা একত্রিত করে, একটি কমিটি করে যেগুলো বিবেচনাযোগ্য, সেগুলো তুলে ধরা হোক। এই সংশোধনের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সরকারই এই কমিটি গঠন করতে পারে। আর সরকার না পারলে আমরাও কমিশন গঠন করতে পারি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সর্বশেষ খবর