মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

ইফতেখারুজ্জামান

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের দাবি-দাওয়ার মধ্যে দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে তবে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষক দলের প্রধান শাহজাদা এম আকরাম। আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার সংকট রয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে, নির্বাচন করা অসম্ভব। কারণ নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন করে না। এতে বড় ভূমিকা রাজনৈতিক দলগুলোর। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছাই সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় নিয়ামক। এ ছাড়া সুষ্ঠু প্রশাসন ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজকেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দু-একটা দেশ আমাদের দেখে নির্দলীয় সরকারের আন্ডারে নির্বাচন করছে। বাকি সব দেশই দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাস্তবতা হচ্ছে দেশে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা আর নেই। আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার বিষয়টিও একটি বাস্তবতা।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একচ্ছত্র করার প্রবণতা বিদ্যমান। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার ঘাটতি রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে কয়েকটা নির্বাচন ভালো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো চেয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পরাজয় হলেই ফলাফল মেনে না নেওয়া এবং ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। এমন আচরণ পরিহার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার পূরণ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী প্রধান বলেন, তাদের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে যে পরিমাণ উৎসাহ থাকে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফারাক অনেক লক্ষ্যণীয়। অবশ্য কিছু কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও রয়েছে। গত ১০ বছরে সুশাসন ও শুদ্ধাচার সম্পর্কিত নীতি কাঠামো অনেক সুদৃঢ় হয়েছে। কিন্তু যেসব নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে সেটায়ও ঘাটতি আছে। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সহায়ক ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অনেক সংস্কার হলেও বেশ কিছু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি তথ্য অধিকার আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী আইন হলেও এর পরিপন্থী অনেক আইন করা হচ্ছে। মূল প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা বাড়ানো, দলের আর্থিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা, দলীয় প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি না হওয়া, বিরোধী দলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা, নির্বাচনী ইশতেহারে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত নেওয়া, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে এমপিদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি, জাতীয় বাজেটে কালো টাকাকে বৈধতা না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সর্বশেষ খবর