বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গ্রেনেড হামলার রায় ১০ অক্টোবর

সাবেক তিন আইজিপিসহ জামিনে থাকা আট আসামি কারাগারে । বিচারে কোনো ফাঁক না রাখার চেষ্টা করেছি : আদালত । সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রেনেড হামলার রায় ১০ অক্টোবর

বাবরসহ ২৩ আসামিকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা বহুল আলোচিত দুই মামলার রায়ের জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ঠিক করেছে আদালত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এ মামলার অন্যতম আসামি। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ১১৯তম দিন এ দুই মামলার বিচার শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে একসঙ্গে বিচার চলছে দুটি মামলার। রায়ের তারিখ ঠিক করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিনে থাকা পুলিশের সাবেক তিন আইজিপিসহ আট আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এ সময় আদালত বলে, ‘বিচারিক কার্যক্রমে পদ্ধতিগত ত্রুটি যেন না থাকে এ জন্য জামিনে থাকা আসামিদের জামিন বাতিলের আদেশ দিচ্ছি।’ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এ মামলার বিচারের শেষ দিকে আমরা এসেছি। এ মামলার বিচারে কোনো ফাঁক রাখার চেষ্টা করিনি। কখনো কারও অধিকার বঞ্চিত করিনি। বিচারকাজ শেষ হচ্ছে। আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’ বিচার চলাকালে সহযোগিতার জন্য আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান বিচারক। বিচার শেষ হওয়া রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২১ আগস্ট হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্যতম ও বর্বরোচিত হামলা।’ সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’ গতকাল আসামিপক্ষে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, এস এম শাহজাহান। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের (আসামি) খালাসের আরজি জানিয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, মো. আবু আবদুল্লাহ ভূঞা, অ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত জিহাদ, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ। ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হলো। এর মধ্যে এখনো তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেছেন। পলাতক আসামিরা হলেন মাওলানা তাজউদ্দিন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ব্যবসায়ী মো. হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই, এ টি এম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া জামিনে থাকা আট আসামিকেও গতকাল কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক। এরা হলেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। এ দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করে। গত বছর ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও দলীয় নেতা-কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। এ হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা (প্রয়াত) আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এ মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এ মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যোগ হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জন।

সর্বশেষ খবর