অব্যাহত প্রতিবাদ ও আপত্তির মুখেও জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করার প্রতিবাদে সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। আগামী শনিবার ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। গণমাধ্যমে কর্মরত সব সাংবাদিক-কর্মচারীকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল ডেইলি স্টার ভবনে সম্পাদক পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সম্পাদক পরিষদের বৈঠকে অন্য সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে একটি যুক্ত বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিদাতারা হলেন— প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, দ্য ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনূস ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ প্রমুখ।
বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ সংসদে এ ধরনের একটি আইন পাস হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে। পরিষদ মনে করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। সংবিধানে মুক্ত গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার পরিপন্থী। তাই এর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে গণমাধ্যমে কর্মরত সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সই না করতে রাষ্ট্রপতিকে সিপিজের আহ্বান : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর না করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে চিঠি দিয়ে তারা বিলটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানোরও আহ্বান জানিয়েছে।গত ২১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বরাবর পাঠানো ফ্যাক্স বার্তায় বলা হয়, আইনটি কার্যকর হয়ে গেলে বাংলাদেশের সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে তা বিঘ্নিত হবে। সিপিজের এশিয়া সমন্বয়ক স্টিভেন বাটলার স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়, এই আইনের ফলে সাংবাদিকরা পেশাগত খুব স্বাভাবিক কাজেও বড় ধরনের আইনগত ঝুঁকিতে পড়বেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘এই বিল সংশোধনের জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে আপনার যে সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে তা প্রয়োগ করার জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে সিপিজে।’
প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন ধারা কীভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে তা উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গর্ব করার মতো ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় শক্তিশালী প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে এই পরম্পরা হুমকির মুখে পড়বে ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় গণতান্ত্রিক সমাজে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।