শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কীভাবে হবে রায় কার্যকর

আরাফাত মুন্না

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা করার ১৪ বছর পর রায় হলো। এ রায় কীভাবে কার্যকর হবে, এ প্রশ্ন এখন সবার। গত বুধবার দেওয়া রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

আইনজ্ঞরা বলছেন, দণ্ডের ধরনের ওপর ভিত্তি করে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে রায় কার্যকরে উচ্চ আদালতের অনুমোদন নিতে হবে। যেসব আসামি যাবজ্জীবন বা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন তাদের দণ্ড রায়ের দিনই কার্যকর শুরু হয়েছে। তারা বলেন, সব আসামি এমনকি রাষ্ট্রপক্ষও রায়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবে। আপিল করতে হবে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে। যারা লঘুদণ্ড পেয়েছেন তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে জামিন পেতে পারেন বলেও জানান ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা।

দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, আসামিদের সাজা হাজতবাসের সময় থেকে বাদ যাবে। যেসব আসামি দুই মামলায় সাজা পেয়েছেন তাদের একযোগে দণ্ড কার্যকর হবে। যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের পর থেকে দণ্ড কার্যকর হবে। আর কারাগারে থাকা আসামিদের দণ্ড এখন থেকেই কার্যকর। জানা গেছে, বর্তমানে হাই কোর্টে দুই শতাধিক মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়টিও অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে আসবে। সাধারণ নিয়মে এই ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হতে তিন থেকে চার বছর লাগতে পারে। তবে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের মামলাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হয়েছে। এ মামলাটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানেও আমরা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করব।

মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর প্রক্রিয়া : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের বিষয়ে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর সেই রায় কার্যকরে বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রথমেই ফাঁসির সাজা আসামিদের দণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাই কোর্টে ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে আসবে। এ মামলার যাবতীয় নথি ও রায়ের কপি বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে পাঠাবেন রায় প্রদানকারী বিচারক। রায়ে স্বাক্ষর করার পরপরই এগুলো পাঠানোর রীতি রয়েছে। তিনি বলেন, ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করতে পারবেন। তবে কোনো আসামি আপিল না করলেও ডেথ রেফারেন্স শুনানি ছাড়া তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হওয়ার জন্য প্রথমেই পেপারবুক মামলার এফআইআর, চার্জশিট, বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় তথ্যসংবলিত নথি তৈরির উদ্যোগ নেবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পেপারবুক তৈরির পরই হাই কোর্টের নির্ধারিত বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন হবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল। হাই কোর্টে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে তিনি যদি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন, তাহলে আপিল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত ওই দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। আপিল বিভাগেও যদি দণ্ড বহাল থাকে তাহলে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগও পাবেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থাৎ কত দিন : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যেসব আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাদের কতদিন জেল খাটতে হবে তা নিয়েও নানা কৌতূহল আছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এক রায়ে (ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস হবে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। এ রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যে রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড লেখা থাকবে সেখানেই কেবল মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে আসামিকে। আর যদি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড লেখা থাকে তাহলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী নির্ধারণ হবে সাজার মেয়াদ।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ৩০ বছর কারাবাস নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই ধারায় বলা হয়েছে, সাজার মেয়াদের ভগ্নাংশ হিসাবের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৩০ বছর মেয়াদের কারাদণ্ডের সমান বলে গণনা করা হবে।

পলাতক ও লঘুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা : আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ৪৯ আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। এসব আসামির গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকেই তাদের সাজা কার্যকর হবে। তিনি বলেন, এ ছাড়া এ মামলায় যারা দুই বছর ও তিন বছর কারাদণ্ড পেয়েছেন, তারা হাই কোর্টে আপিল করে জামিন পেতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত যদি দণ্ড বহাল থাকে তাহলে জেল খাটতেই হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর