সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিবেশ না পেলে ভোটে যাবে না বাম জোট

ঝর্ণা মনি

ভোটের রাজনীতিতে বাম দলগুলোর অবস্থান খুবই দুর্বল; গণমনে তেমন কোনো তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারছে না। তবুও ‘একলা চলো নীতি’তে বিশ্বাসী বামদের একটি অংশ এখনো নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে রাজপথে রয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলেই শুধু নির্বাচনে যাবে বাম জোট। বলছে, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে তারা। আর পরিবেশ না থাকলে আগের মতোই নির্বাচন বর্জন করবে বাম জোট। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো জোটে যাওয়ার সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা।  বাম জোটের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে অর্থহীন ও পণ্ডশ্রম। ইতিমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ কমানো, তফসিল ঘোষণার আগে পার্লামেন্ট ভেঙে নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবিতে আন্দোলন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একই দাবিতে জোটের পক্ষ থেকে আজ রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জন করবে তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনকে আমরা আন্দোলন হিসেবেই দেখছি। বিগত ৪৭ বছর ধরে ভোটের নামে দেশে পরিবারতন্ত্র ও ক্ষমতার রাজনীতি চলছে। ক্ষমতাসীনরা জনগণকে কিছুই দেয়নি। আসন্ন নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব, প্রশাসনিক কারসাজি, পেশিশক্তির বিপরীতে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বয়কট— দুই প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে আমরা নির্বাচনে যাব, নতুবা বর্জন করব। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি জোটে যাবেন কিনা এর জবাবে সেলিম বলেন, দেশের দুর্দশার জন্য এরাই দায়ী। এদের দুঃশাসনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে সংগ্রাম করছি। বুর্জোয়া দলের বলয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করব না।  জোট নেতারা জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা সেটি নিয়েও এক ধরনের সংশয়-সন্দেহ রয়েছে তাদের। এ অবস্থায় নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন তারা। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বিদ্যমান পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অসম্ভব। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, সাধারণ জনগণও নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতায় ভুগছে। সরকারের প্রতি আস্থা নেই। ইসির প্রতি আস্থা নেই। এর আগে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনও ইসি উপহার দিতে পারেনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। তিনি বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। সব মিলিয়ে সংকট আরও বাড়ছে। আস্থাহীনতা বাড়ছে। এ অবস্থা থাকলে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা বহাল থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই কিন্তু গত নির্বাচনের মতো তামাশার নির্বাচন হলে তার অংশ হব না। নির্বাচন বয়কট করব। তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণের বিকল্প শক্তি হিসেবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে আছি, রাজপথেই থাকবে বাম জোট। আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো জোটে আমরা যাচ্ছি না। গণতান্ত্রিকভাবে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটাতে চাই। নেতারা বলেন, বাম জোট মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, কেবল নির্বাচনী জোট নয়। ফলে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া এখানে মুখ্য নয়। এ ব্যাপারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য লড়াই করছি। রাজপথে জনগণের শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম। আর অন্য জোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে যাব কিনা তা নির্ভর করবে পরিবেশের ওপর। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ত্রিধারায় বিভক্ত বাম দলগুলো রাজনীতিতে কোনো তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারছে না। ভোটের ক্ষেত্রেও তারা বড় ফ্যাক্টর নয়। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক সমীকরণ একটু ভিন্ন। এখনো কিছু মানুষ মনে করে, ক্ষমতার পালাবদলকারী দলগুলোর বাইরে থাকা বাম দলগুলো সাধারণ জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে গিয়ে তারা দেশের সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কিনা, এটিও একটি বড় প্রশ্ন।

সর্বশেষ খবর