বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাজা বেড়ে ১০ বছর জেল খালেদা জিয়ার

তারেক রহমানসহ অন্য তিন আসামির সাজা বহাল

আরাফাত মুন্না

সাজা বেড়ে ১০ বছর জেল খালেদা জিয়ার

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আপিল এবং দুদকের একটি রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে দেওয়া রায়ে এ মামলার অন্য আসামিদের ১০ বছর কারাদণ্ড হলেও খালেদা জিয়ার হয়েছিল পাঁচ বছর জেল। এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে বিএনপি  চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ হাই কোর্টে আপিল করে খালাস চেয়েছিলেন। তারেক রহমানসহ অন্য তিন আসামি পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আপিলের সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে মামলা দায়েরকারী ও তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়াতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করেছিল, যার ওপর রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। গতকাল রায় ঘোষণার সময় আদালত বলে, আমরা রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ ঘোষণা করছি। বিস্তারিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে থাকবে। তিনটি আপিল খারিজ করে দেওয়া হলো। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যে রুল জারি করেছিল, তা যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করা হলো এবং খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হলো। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর ক্ষেত্রে হাই কোর্ট কোন বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে, তা এই সংক্ষিপ্ত রায়ে আসেনি। এদিকে এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের ১৭ নম্বর কক্ষের সামনে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনালের মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ফরহাদ আহমেদ, একরামুল হকসহ আইন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজাক খানসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের রায়ের সময় আদালতে দেখা যায়নি। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া ছিলেন এ মামলার মুখ্য আসামি। অন্য আসামিদের যেখানে ১০ বছরের সাজা হয়েছে, মুখ্য আসামি তার চেয়ে কম সাজা পেতে পারেন না। এ কারণে হাই কোর্টের রায়ে সব আসামির সাজা সমান করা হয়েছে বলে তিনি অনুমান করছেন।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া ছিলেন এ মামলার মুখ্য আসামি। সেই গ্রাউন্ডে তার সাজা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে। ফলে মামলায় সব আসামির সাজাই ১০ বছর হলো।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। অভিযোগে বলা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এ মামলার আসামিরা। মামলা হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত ছয় আসামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করে। পরে খালেদা জিয়ার আবেদনে মামলাটি যায় ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ে খালেদা জিয়াকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ক্ষমতায় থেকে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের কারণে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার বাকি পাঁচ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক। রায়ে বিচারক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বয়স ও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালেদাকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাই কোর্ট। গতকাল রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে খবর জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আগের দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের খবরও জানানো হয়েছিল তাকে। রায়ের খবর শুনে কারাবন্দী খালেদা জিয়া কোনো মন্তব্য করেননি। কারা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার ও গতকাল দুই দিনই আমরা নিয়মানুযায়ী খালেদা জিয়াকে মৌখিকভাবে রায়ের খবর জানিয়েছি। দুজন নারী ডেপুটি জেলার তাকে রায়ের খবর জানান। রায়ের পর খালেদা জিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

 গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর করে দিয়েছে হাই কোর্ট। আর এর আগে গত সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।

সর্বশেষ খবর