বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার বৈঠক

মধ্য নভেম্বরে শুরু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়েই শুরুর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে হওয়া তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে  যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রথম ধাপে ঠিক কতজনকে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া না হলেও মিয়ানমার জানিয়েছে, প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন শেষ হলে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ  নেওয়া হবে। দুই দেশের সচিবই বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। আজ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা প্রথমবারের মতো কক্সবাজারে গিয়ে  রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।

গতকাল সকালে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় শুরু হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় এ বৈঠক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সচিব মিন্ট  থোয়ে যৌথভাবে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। পরে দুপুরে যৌথ সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, আজ আমাদের দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ভালো বৈঠক হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা শুধু নিরাপত্তা নয়, আনুষঙ্গিক বিষয় মাথায় রেখেই একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে আগামী মাসের (নভেম্বর) মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের একটা অংশ ফেরত নেওয়া হবে। তবে কতজনকে মিয়ানমার প্রথম ধাপে ফেরত নেবে, এ বিষয়ে কিছু বলেননি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব। মিন্ট থোয়ে বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে মিয়ানমার সরকার। এ ছাড়া ফেরত যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা যাতে আইনি সহায়তা পেতে পারে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেন সহায়তা করেন সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা  যেন রাখাইনের অধিবাসীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ না করেন তা নিশ্চিত করতে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কর্মশালাও করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। আমরা  রোহিঙ্গাদের  ফেরতের বিষয়ে  সেইফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন  যে, নভেম্বরেই সেইফটি ও সিকিউরিটির মাধ্যমে  রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরা শুরু হবে। শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল।  কেবল দুই  দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকলে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  চেয়েছেন যেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শান্তিপূর্ণভাবে হয়।  সে কারণেই মিয়ানমারের সঙ্গে বার বার আলোচনার উদ্যোগ  নেওয়া হচ্ছে এবং আলোচনা করা হচ্ছে। মূলত এ বিষয়টি নিয়েই আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা কক্সবাজারে ক্যাম্পে গিয়ে  রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের নিরাপদে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করব।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি  রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু করলে পরবর্তী কয়েক মাসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর আরেক দফা নৃশংসতা শুরু করলে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। পরে এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে একটি চুক্তি সই করেন। সে অনুসারে চুক্তির এক মাসের মধ্যে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের মধ্যে  বৈঠকের মাধ্যমে ৩০ সদস্যের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।

সর্বশেষ খবর