বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তফসিল ঘোষণার সমর্থন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার সম্পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কবে, কখন হবে তা ইসি নির্ধারণ করবে। আজ তফসিল ঘোষণার কথা ইসির, তাতে সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমাদের। এরই মধ্যে ইসির সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়া বাকিরা এদিন তফসিল ঘোষণার পক্ষে মত দিয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে এইচ টি ইমাম বলেন, ইসি স্বাধীন, সাংবিধানিক ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। আমরা তফসিল আগানো বা পেছানোর কথা বলিনি। যখনই কমিশন তফসিল দেবে তাতে আমরা সহযোগিতা করে যাব। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের অবস্থান জানায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ১৬ সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও এনজিওদের নিতে মানা : নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা বাছাইয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এইচ টি ইমাম জানান, ৩০০ আসনের ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও প্রায় ৭ লাখ লোকবল দরকার পড়ে। এ বিশাল লোকবল নিয়োগে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রের প্রতিটিতে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়ে এ ৭ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দরকার হয়। আমরা বলেছি, কোনোভাবেই বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও কর্মকর্তাদের যেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া না হয়। এ বিষয়ে কমিশন একমত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দেয় দলটি। এইচ টি ইমাম বলেন, বিদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় আসা কাউকে যেন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া না হয়; অনিবন্ধিত সংস্থার কেউ যেন নিয়োগ না পায়। নীতিমালা মেনেই যেন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইভিএমে ভোট দেওয়া, সেনা মোতায়েন ও নারী-প্রতিবন্ধীদের জন্য ভোটের বিশেষ ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত রয়েছে আওয়ামী লীগের। তিনি জানান, সংলাপে সেনা মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে অতীতে যেভাবে সেনা মোতায়েন হয়েছে এবারও তা রাখার পক্ষে মত আওয়ামী লীগের। আমরা কখনো সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে নই। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে তা মোতায়েন থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে তারা নিয়োজিত হবেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবীর কাওছার, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর ইমাম, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, এনামুল হক চৌধুরী, সেলিম মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা।

তফসিল চায় জাতীয় পার্টি : নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্ধারিত তারিখে তফসিল ঘোষণা, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করাসহ আট দফা দাবি জানিয়ে এসেছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট। গতকাল সোয়া ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার এ বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সম্মিলিত জাতীয় জোটের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আট দফা নিয়ে বক্তব্য রেখেছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ ৮ নভেম্বর করা হোক। সংলাপের অজুহাত দিয়ে তারিখ পেছানোর দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সহজ করার সুপারিশ করেছেন তারা। তা ছাড়া নির্বাচন কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করা, নির্বাচনের সময় অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ ও ভোটের প্রচারে সংঘাত এড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে এর মধ্যে। জাতীয় পার্টির আট দফায় নির্বাচনের সময় মোটরসাইকেল বা গাড়ির ব্যবহার সীমিত রাখা, একই আকারের পোস্টার ব্যবহার, সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার কথাও রয়েছে। ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনগণের মনে এখনো দ্বিধা-সন্দেহ রয়েছে। এটা আধুনিক ভোটিং পদ্ধতি হলেও সাধারণ ভোটাররা ইভিএম ব্যবহারে এখনো অভ্যস্ত নয়। এটা ব্যবহারের আগে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন হবে। সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে এলে মিনিট বিশেক পর বৈঠক শুরু হয়। প্রতিনিধি দলে এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এম এ সাত্তার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, দেলোয়ার হোসেন খান, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, আবদুস সবুর আসুদ ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এ ছাড়া জোটের শরিক নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাহফুজুল হক, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মণি উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর