রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহে দ্বিতীয় দিনেও ঢল

মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে পিকআপচাপায় দুজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহে দ্বিতীয় দিনেও ঢল

ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গতকালও ছিল মনোনয়নপত্র কেনার ভিড় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণের দ্বিতীয় দিনেও ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সারা দেশ থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। আবার কেউ কেউ জমাও দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক শোডাউনে মুখরিত ছিল ধানমন্ডি ৩/এ এলাকা। দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসা নেতা ও  তাদের সমর্থকদের হাতে ছিল কাঠের নৌকা, ফেস্টুন, পোস্টার ও প্লাকার্ড।  গতকাল দ্বিতীয় দিনেও মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয় সকাল ১০টায়। দুপুরের খাবারের জন্য আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে টানা রাত ৯টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১ হাজার ১৩২টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ১১১টি, ঢাকা বিভাগে ৩৩৮টি, রাজশাহী বিভাগে ১০৫টি, খুলনা বিভাগে ১১৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৩১টি, সিলেট বিভাগে ৫২টি এবং বরিশাল বিভাগে ৫১টি।

নারায়ণঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমানের পক্ষে নেতা-কর্মীরা বিশাল মিছিল নিয়ে এসে দলের সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাত থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ফরিদপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে নির্বাচনী এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসেন। বিশাল শোডাউন করে গতকাল দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এই ছাত্রনেতা। একই আসনে ঢাকঢোল বাদ্য বাজিয়ে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়। সাবেক ছাত্রনেতা হাফিজুর রহমান ভুইয়া সজিব নারায়ণগঞ্জ-১ ও দেলোয়ার হোসেন ফারুক কুমিল্লা-৯ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিশাল শোডাউন করে। ফেনী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র উঠিয়েছেন সাঈদ ইস্কানদারের ভায়রা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু-ঝালকাঠি-২, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু ঢাকা-৮ ও ৯,  প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন ঢাকা-১৮, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-৩, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুর-২, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মুন্সীগঞ্জ-২, অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ঢাকা-১৭, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা ঢাকা-১৫ সাবিনা আক্তার তুহিন ঢাকা ১৪, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম মানিকগঞ্জ-২, নায়ক শাকিল খান বাগেরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ফরম ক্রয় ও জমা দিয়েছেন শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, উমর আবদাল বিন তানিম ঢাকা-৭, শফি আহমেদ নেত্রকোনা-৪, গাজী ম. ম আমজাদ হোসেন মিলন সিরাজগঞ্জ-৩, ওমর শরীফ ভোলা-২, শেখ সোহেল রানা টিপু রাজবাড়ী-২, এমরান হোসাইন খান মুন্সীগঞ্জ-১, এ এইচ আসলাম সানী নরসিংদী-৪, গোলাম মহিউদ্দিন লাতুু নোয়াখালী-৪, মীর মোশাররফ হোসেন সিরাজগঞ্জ-৫, রফিকুল ইসলাম লিটন পাবনা-৪, সুবিদ আলী ভুইয়া, আবদুল আউয়াল সরকার, নাঈম হাসান কুমিল্লা-১, হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদ আলী খোকন, ডা. এহসানুল কবির জগলুল-লক্ষ্মীপুর-২, অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি সিরাজগঞ্জ-৩, মোবারক আলী শিকদার শরীয়তপুর-১, জাফর আহমেদ জয় ঢাকা-৬, টিপু সুলতান ঢাকা-১৪, হাসিবুর রহমান বাগেরহাট-২, শেখ আলাউদ্দিন খুলনা-২, মনসুর আহমেদ সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, রাশেদ সমশের ঝিনাইদহ-৪, সুলতানা তরুন-কুষ্টিয়া-৪, শহীদুল ইসলাম হিরণ ঝিনাইদহ-২, অধ্যাপক আবেদ আলী ঝিনাইদহ-১, শেখ আবদুর রফিক যশোর-৬, মতিয়ার রহমান চুয়াডাঙ্গা-২, বিএম একরামুল হক নড়াইল-১, ফাহাদ হোসেন  মেহেরপুর-১, বেগম মমতাজ ফারুক মোহাম্মদ যশোর-২, ময়েন উদ্দিন কুষ্টিয়া-১, গোলাম মোস্তফা মেহেরপুর-২, স্বপন ভট্টাচার্য যশোর-৫ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ২ আহত ১৫ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কিনতে যাওয়ার সময় রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত হয়েছেন দুই তরুণ। গতকাল সকালে মোহাম্মদপুরের আদাবরে নবোদয় হাউজিংয়ের মোহাম্মদিয়া হোমসে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গতকাল মোহাম্মদপুরে আরও চারটি স্থানে দুই পক্ষের মিছিলকারীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। পিকআপের নিচে চাপা পড়ে নিহতরা হলেন আরিফ (১৫) ও সুজন (১৭)। তফসিল ঘোষণার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটিই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা।

ঢাকা-১৩ আসন মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক এবারও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানও মনোনয়ন চাইছেন এবার।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, সকালে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাদেক খানের সমর্থকরা আলাদাভাবে মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র নিতে যাচ্ছিল। পথে নবোদয় হাউজিংয়ের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পিকআপ চাপায় দুজন নিহত হন। দুই তরুণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মিছিলে ছিলেন। তবে তারা কোন পক্ষের সমর্থনে ছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মোহাম্মদিয়া হোমসের প্রত্যক্ষদর্শী একজন নির্মাণশ্রমিক বলেন, সকাল ১০টায় একটি মিছিল নবোদয় হাউজিংয়ের মোহাম্মদিয়া হোমসের ভিতরের সড়কে প্রবেশ করে। এ সময় মিছিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি পিকআপ ছিল। একটি পিকআপ হোমসের সড়কের শেষ মাথার লোহার গেটে এসে থামে। এ সময় উল্টো দিক থেকে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর আরেকটি ছোট মিছিল এগিয়ে আসে। ওই মিছিল থেকে ‘ধর, ধর’ বলে ধাওয়া করা হয়। সঙ্গে ইটপাটকেল ছোড়ে মিছিলকারীরা। এ সময় হোমসের ভিতরের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন একটি পিকআপ ভ্যান দ্রুত ঘোরাতে গেলে তার নিচে চাপা পড়েন আরিফ ও সুজন। আরিফকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আরিফের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, ‘যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল আমার ভাই। তাদের গাড়িতে হামলা হলে সে নেমে পালানোর সময় ওই গাড়িতেই পিষ্ট হয়।’ তবে নিহত দুই তরুণের এক বন্ধু দাবি করেছেন, তারা বেড়ানোর উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন। পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। আরিফ রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন বলে তার ভাই জানান। সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। নবোদয়ের পাশাপাশি আদাবরের ১০ ও ১৬ নম্বর সড়ক, শম্পা মার্কেট এলাকা এবং উত্তর আদাবরের সুনিবিড় হাউজিংয়েও একই সময়ে এই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওসার আহমেদ বেলা পৌনে ১১টায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধেছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালাচ্ছি।’ নিহত আরিফের বাবার নাম ফারুক এবং সুজনের বাবার নাম নুরুল আমিন। তারা দুজনই নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাদেক খান সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় দুজনের মৃত্যু-সংক্রান্ত খবর ভিত্তিহীন। ঘটনাটি মূলত সাদেক খানের সমর্থকদের মিছিলে বিশৃঙ্খলা থেকে সৃষ্ট। সাদেক খানের মিছিলে আনা পিকআপের নিচে চাপা পড়ে তার সমর্থক নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে জাহাঙ্গীর কবির নানকের কর্মী-সমর্থকদের কোনো মিছিলই ছিল না।

সংঘর্ষের বিষয়ে সাদেক খান বলেন, যুবলীগের তুহিনের নেতৃত্বে তার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিন সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তুহিন বলেন, হামলাকারীরা জামায়াত-শিবির-বিএনপির লোক। তারা আওয়ামী লীগের লেবাস পরে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে।

সর্বশেষ খবর