রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনে না এলে সমস্যায় পড়বে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনে না এলে সমস্যায় পড়বে বিএনপি

এটিএম শামসুল হুদা

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, এককভাবে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। সবার অংশ গ্রহণেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচন ও সংসদ বর্জন করা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয়। গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, এবার সেটা করবে বলে মনে করি না। আশা করি তারা নির্বাচনে আসবে। এই নির্বাচনে না এলে   তারা সমস্যায় পড়বে। জনগণ এখন আর আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ, জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না। কিছুদিন আগে শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে যা করেছিল, তা ছিল অমানবিক। সবাই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে গতকাল ‘জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’-এ অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর সহযোগিতায় ‘সুজন— সুশাসনের জন্য নাগরিক’ এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

যেহেতু সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি, তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা— এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন ও সংসদ বর্জন করা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয় বলে আমি মনে করি। কারণ জনগণ ভোট দিয়ে যাদেরকে সংসদে পাঠায়, তারা যদি কথায় কথায় সংসদ বর্জন করেন, তাহলে জনগণকে ক্ষমতাহীন করা হয়, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমি মনে করি, কোনো বিষয়ে মত-দ্বিমত থাকতেই পারে, কিন্তু নির্বাচনী মাঠ বর্জন করা ঠিক নয়। তাছাড়া কোনো একটি দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখন প্রথাগত রাস্তার আন্দোলন মানুষ মেনে নেয় না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও  কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সাধারণত কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে বাধ্য। কিন্তু সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কমিশন চাইলে তফসিল ঘোষণা আরও পিছিয়ে দিতে পারত। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষা চলছে। আরেকটি বিষয় হলো— যদি ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২৮ জানুয়ারির আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে একসঙ্গে দুটি সংসদ বহাল থাকবে। এটি দেশে সাধারণত দেখা যায় না।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য হুদা কমিশন দুই বার তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে সরকার আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে যতগুলো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও সুষ্ঠু হয়নি। এর মূল কারণ হলো প্রশাসনের ব্যাপক দলীয়করণ।

ড. তোফায়েল আহমেদ বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। আদালতের কাজ হলো দিক-নির্দেশনা দেওয়া।

সর্বশেষ খবর