বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার ইমেজেই ভরসা আওয়ামী লীগের

জুলকার নাইন

শেখ হাসিনার ইমেজেই ভরসা আওয়ামী লীগের

দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজের ওপর ভর করেই ভোটে লড়বে আওয়ামী লীগ। বিশ্বজুড়ে নতুন উচ্চতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর গত ১০ বছরের উন্নয়ন সাফল্য ও আগামী নির্বাচনের পর দেশকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা মানুষের সামনে দলীয়ভাবে তুলে ধরা হবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক প্রচার। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের পথে এগিয়ে নিতে চান সেটাই জনগণের সামনে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ থাকছে দেশের তরুণসমাজের জন্য। নির্বাচনের আগেই প্রকাশ পাচ্ছে শেখ হাসিনার জীবন নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সব ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, ডিজিটাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাধ্যান্য পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এসবের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যার জীবনাদর্শ, বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যতের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা ও অর্জনের বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হচ্ছে।

জানা যায়, বিভিন্ন জরিপে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির তথ্য উঠে আসছে বেশ কিছুদিন ধরেই। আওয়ামী লীগের সমালোচনা হলেও শেখ হাসিনার বিষয়ে জনমত একেবারেই ভিন্ন। ২০১৩-১৪ সালে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কঠোরভাবে দমন করে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ : ২০১৮, প্রাক-পূর্বাভাস’-এ বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মাধ্যমে দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরিস্থিতি একেবারেই উল্টো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে। তার ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়েছে। তিনিই আওয়ামী লীগের প্রধান শক্তি। শুধু শেখ হাসিনার ক্যারিশমাতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারে দলটি। শেখ হাসিনা যদি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে আগামী নির্বাচনে দলটির ভরাডুবির আশঙ্কা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। পর্যালোচনায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে ইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৭৭ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। ৭৯ ভাগ মানুষ মনে করে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে সৎ এবং দেশের ভালোর জন্য কাজ করছেন। ৮৭ ভাগ মানুষ মনে করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) গত সেপ্টেম্বরে তাদের জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমান বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। ৬৬ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে। ৭২ দশমিক ৩ ভাগ নাগরিক মনে করে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। জরিপে বলা হয়, ৭৫ ভাগ তরুণের মতে, বাংলাদেশ আগামী ১৫ বছরে আরও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাদের মধ্যে ৬০ ভাগ তরুণ মনে করে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব জানতে জরিপের প্রয়োজন নেই। আজকে আওয়ামী লীগ যে স্বর্ণযুগ পালন করছে তার পেছনে একমাত্র শেখ হাসিনারই অবদান। এ কারণেই আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনেরও স্লোগান ছিল— ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরে ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল। দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, ধারাবাহিকভাবে সাতের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সবই শেখ হাসিনার অর্জন। শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, কূটনৈতিকভাবেও শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছেন। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এ চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্কও সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার কারণেই। রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়ে বিশ্বমানবতার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় স্থানে উঠে যাওয়া ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনার ইমেজের কারণেই। আজকের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো রাজনৈতিক শক্তিও নেই। তাই শেখ হাসিনার ইমেজের ওপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী।

সর্বশেষ খবর