শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রার্থী ঘোষণায় কৌশলী দুই জোট

সতর্কতা নিয়ে আরও সময় নিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট

মাহমুদ আজহার

সতর্কতা নিয়ে আরও সময় নিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট

‘যোগ্য’ প্রার্থী বাছাইয়ে আরও সময় নিতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী কে কোথায় তাও পর্যবেক্ষণ করতে চায় তারা। ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে জোট ও ফ্রন্ট। এর আগে তারা ঘোষণা দিতে চায় না। গতকাল দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট থেকে দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি দলের যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে বিএনপির আসন বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম অংশ নেবেন। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রতিটি দলের দুজন করে সদস্য অংশগ্রহণ করে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। এ ক্ষেত্রে এলাকায় জনপ্রিয়, দক্ষ, যোগ্য ও অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের নেতাকে বাছাই করা হবে। একইভাবে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথকভাবে বিএনপির আসন বণ্টনসংক্রান্ত নেতারা বৈঠকে বসবেন। তবে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে একটু বিলম্বে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোট ও ফ্রন্টের মনোনয়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখন দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছি। এরপর দলীয়ভাবে চূড়ান্ত করে তা নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে জোট-ফ্রন্টের তালিকা  তৈরি করব। এতে কোনো সমস্যা হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের স্বার্থে আমাদের প্রার্থীরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা এখন দলীয়ভাবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছি। এরপর ঐক্যফ্রন্টের একটি কমিটি এসব মনোনয়ন নিয়ে বসে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছি। অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রার্থী যে দলেই থাকুক না কেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ বিএনপিসূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরে হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপির হেভিওয়েট কয়েকজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হতে পারে। এ ছাড়া জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতাকে ঢাকায় আসন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিএনপি থেকে মহানগরে মাত্র তিনজনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন মির্জা আব্বাস, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা জানান, আসন বণ্টন বিএনপির জন্য এবার খুব একটা চ্যালেঞ্জিং হবে না। তবে জোট ও ফ্রন্টে যোগ্যতা থাকলে সবাইকে প্রার্থী করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েকজন নেতা দেখা করে এসে এ পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দলের পুরনো নেতা ও আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা নেতাদেরও মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। বিচারিক আদালতে বেগম জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি নেতাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজেরে তরুণ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। এ ছাড়া নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকেও সংসদে রাখার পক্ষে তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ‘প্রতিটি সংসদীয় আসনে গড়ে ১০ জনের বেশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে অর্ধেক প্রার্থীই যোগ্য। তাতেও ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েও শেষ করা যাবে না। তা ছাড়া জোট ও ফ্রন্টকে ৬০ থেকে ৮০টি আসন ছেড়ে দিতে হবে। আসন বণ্টন করতে গিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিএনপিকে। তবে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে।’

এদিকে জোট ও ফ্রন্টের প্রার্থীকে জেতানোর কৌশল হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন জোটের নেতারা। তবে জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে কার্যকর গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করতে হবে। এ কারণে ফ্রন্টগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, এ দুই দলের প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এ বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। প্রত্যেক দল ও জোটের সঙ্গে বসতে হবে। তারপর আমরা ঠিক করব। জোটের শরিক দলগুলো এখন নিজেরা গোছাচ্ছে। বিএনপিও নিজেদের মধ্যে বসে প্রার্থী বাছাই করবে। যে কোনো দলই যোগ্য বা জেতার মতো প্রার্থী পেলে তাকে মনোনয়ন দিতে চাইবে।’ এদিকে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ভোট পর্যন্ত কোনো অহেতুক ঝামেলায় না জড়াতে। তবে ভোটকে উৎসব হিসেবে নিয়ে সবাইকে মাঠে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অস্বস্তিতে দলের নীতিনির্ধারকরা। এ ধরনের ঘটনা বিএনপির মনোনয়ন উৎসবে ভাটা পড়েছে বলেও মনে করেন তারা। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলতে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। এতে একমত বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারাও।

সর্বশেষ খবর