শিরোনাম
বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইনজ্ঞদের অভিমত

নির্বাচনী কার্যক্রমে পলাতক তারেকের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ বেআইনি

ইসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

আরাফাত মুন্না

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা। তারা বলেন, হত্যা ও দুর্নীতির তিন মামলায় দণ্ডিত হয়ে পালিয়ে থাকা তারেক রহমানের এমন কর্মকাণ্ড দেশের কোনো আইনই সমর্থন করে না। পালিয়ে থেকেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকাশ্য নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারেক দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন বলেও মন্তব্য তাদের। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ পলাতক তারেকের বিষয়ে কিছুই করার নেই বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কি-না? কমিশন বিএনপিকে কঠোরভাবে সতর্ক করতে পারত বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। আইনজ্ঞরা বলেন, এমন ভাবে পলাতক আসামিরা যদি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে, তাহলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরাসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার পলাতক আসামিরাও বিদেশে বসেই দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাবে। এ ছাড়া পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও নিজেদের কার্যক্রম প্রসারিত করতে উৎসাহিত হবে। তারেকের কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশন কোনো সমস্যা দেখে না বলে ইসি সচিব যে বক্তব্য   দিয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সের খবর গণমাধ্যমে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পলাতক আসামির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়টিকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ এবং প্রচলিত আইনবিরোধী বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দণ্ডপ্রাপ্ত ও আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ এক ব্যক্তির নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়টির বিরুদ্ধে ইসির কাছে অভিযোগও করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। তবে নির্বাচন কমিশন তারেকের এমন কর্মকাণ্ডে কোনো অসুবিধা খুঁজে পায়নি। এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনো মাধ্যমে পলাতক তারেকের বক্তব্য প্রচার-প্রকাশে হাই কোর্টের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা হয়তো নির্বাচন কমিশনের জানা নেই। হাই কোর্টের নির্দেশনার কথা জানা থাকলে নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারেক রহমান একজন পলাতক আসামি। হত্যা ও দুর্নীতির তিনটি মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশে থাকলে তার স্থান হতো কারাগার। ফলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একজন পলাতক আসামি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। দেশের কোনো আইন তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের এ প্রধান আইন কর্মকর্তা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ব্যক্তি। তার বক্তব্য প্রচারে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই যে কোনোভাবেই তারেক রহমান প্রকাশ্যে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তারেক রহমান দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড আদালত অবমাননার শামিল। সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি হাই কোর্ট থেকে বিএনপি গঠণতন্ত্রের বিতর্কিত ৭ ধারা গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে একজন পলাতক আসামির প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই নির্বাচন কমিশনের। ইসি সচিবের বক্তব্য শোনার পর ভাবতে হচ্ছে কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কি-না? সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সম্পাদক বলেন, আজ সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। কাল হয়তো দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার পলাতক আসামিরা বিদেশে বসেই দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, এখনই যদি এসব কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন না করা হয় তাহলে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড চালাবে। তখন হয়তো সব কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৃথক তিনটি মামলায় দেশের আদালত তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে। এ ছাড়া দুটি দুর্নীতি মামলায় পর্যায়ক্রমে ১০ বছর ও ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে তারেক রহমানের। তার বক্তব্য প্রচারেও হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে একজন পলাতক আসামির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই আইন সম্মত নয়। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।

 

সর্বশেষ খবর