শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতের সাত রাজ্যে যাবে বাংলাদেশের পণ্য

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ভারতের সাত রাজ্যে যাবে বাংলাদেশের পণ্য

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য হচ্ছে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল। বৃহত্তর সিলেটের সীমান্তবর্তী তিন দিক দিয়ে থাকা ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে খ্যাত এই রাজ্যগুলোতে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বেশি পণ্য রপ্তানি করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে— পোশাক, টিস্যু পেপার, প্লাস্টিক পণ্য, মেলামাইন ও সিরামিক সামগ্রী, মাছ, ওষুধ সামগ্রী, মিনারেল ওয়াটার, ইট, রড, সিমেন্ট, পাথর, পিভিসি পাইপ, টয়লেট ফিটিংস, ব্যাটারি, বাইসাইকেল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, প্যাকেটজাত ফলের রস প্রভৃতি। বিদ্যমান কিছু সমস্যার সমাধান করা গেলে এই ‘সেভেন সিস্টার্স’ বাংলাদেশের জন্য অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে বলে  মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। একটি সমীক্ষার তথ্য মতে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি ব্যয় হয়। যার ফলে এ সাতটি রাজ্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর জন্য নির্ভর করে বাংলাদেশের ওপর। এর পেছনে রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। সিলেট থেকে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল রাজ্যগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ পণ্য সেখানে রপ্তানি করেন। রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রায় অর্ধশত ধরনের পণ্য সেভেন সিস্টার্সে রপ্তানি করা হয়। জানা গেছে, ওই সাতটি রাজ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার বসবাস। সেখানে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাজার রয়েছে। এসব রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির অমিত সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে নিতে চান রপ্তানিকারকরা। এ জন্য সিলেটের রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা সরকারি ও বেসরকারি যেসব উদ্যোগ রয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন। সম্প্রতি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিকল্পে সিলেটের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। এর আগেও একাধিবার রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, সেভেন সিস্টার্সের বাজার পুরো দখল করতে হলে বাংলাদেশকে কিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, সেগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উৎপাদিত। সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন না থাকায় এখানে উৎপাদন সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে নেই ওয়্যারহাউস। ফলে অপেক্ষমাণ পণ্য রপ্তানিতে অনেক সময়ই গুণগতমান রক্ষা করা সম্ভব হয় না। ব্যবসায়ীদের দাবি, সিলেটের সব শুল্ক স্টেশনে ওয়্যারহাউস নির্মাণ করতে হবে। বিশেষ করে তামাবিল শুল্ক স্টেশনের কাছাকাছি কোথাও একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের দাবি তাদের।

এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা গেলে বিশেষ করে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা গেলে রপ্তানি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, ‘ইউরোপ, আমেরিকায় থাকা সিলেটের প্রবাসীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে আছে। প্রবাসীরা বিনিয়োগে আগ্রহী। সিলেটে সরকারি উদ্যোগে যে স্পেশাল ইকোনমিক জোন হওয়ার কথা, সেটি বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা। ওই ইকোনমিক জোন হয়ে গেলে সেভেন সিস্টার্সে আমাদের আধিপত্য বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘প্রবাসী ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে হরিপুর বা পার্শ্ববর্তী কোনো জায়গায় একটি ইকোনমিক জোন স্থাপন করতে চাই আমরা। ইকোনমিক জোন করা গেলে উৎপাদিত পণ্য সহজেই সাত রাজ্যে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে পরিবহন খরচও কম পড়বে।’

সর্বশেষ খবর