শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রার্থী

কে ডামি কে আসল কেউ জানে না

জিন্নাতুন নূর

সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নিজ নিজ দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কোনো দম্পতি আসন ধরে রাখতে, আবার কেউ রাজনৈতিক মামলার জন্য স্বামী কারাগারে থাকায় দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও স্বামীর পক্ষে এজেন্ট বৃদ্ধির জন্যও স্ত্রীরা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এই নারীদের কেউ কেউ পৃথক আসনে, কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবার কেউ ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন মামলার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিএনপি নেতার স্ত্রীরা এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এর বাইরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দম্পতিরা এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ-রওশন এরশাদের মতো পরিচিত দম্পতি যেমন আছে, একইভাবে স্বামীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো অনেক স্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।  এবার নির্বাচনে রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ এবং ৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর দলের চেয়ারম্যান এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) ও ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, আর তার স্ত্রী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না বরিশাল-৬ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।  ঢাকা-৮ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন করতে পারেন। একইভাবে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ঢাকা-৯ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দুই আসনে নির্বাচন করবেন। কারণ মামলার কারণে একজন যদি নির্বাচনের অযোগ্য হন তাহলে অন্যজন সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ পারিবারিকভাবে আব্বাস দম্পতি কোনোভাবেই সংসদ সদস্যপদ হাতছাড়া করতে রাজি নন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকা-১৬ ও কুমিল্লা-৩ আসনে ধানের শীষে লড়তে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ দুই আসনেই তার স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. শাহিদা রফিকও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। কোনো কারণে রফিকুল ইসলাম ভোট করতে না পারলে ড. শাহিদা নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুুদা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। একই কাজ করেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এবং জেএসডির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তানিয়া রব। মূলত ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও স্বামীর পক্ষে এজেন্ট বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীরা এ কৌশল নিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে এবার বিএনপির অনেক নেতা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না-ও পারেন। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে তাদের স্ত্রীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। যেমন— নোয়াখালী-৩ আসনে নির্বাচন করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকী নির্বাচনে লড়বেন। প্রসঙ্গত, বুলুর পাশাপাশি নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন শামীমা বরকত লাকী। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এখানে ডামি প্রার্থী হিসেবে আছেন তার স্ত্রী, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি বেগম রুমানা মাহমুদ। নাটোর-২ আসনে (সদর) বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মামলা সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তার সহধর্মিণী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন নির্বাচন করতে পারেন। আর ঢাকা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। মামলা সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী সাবেরা আমান কিংবা তার ছেলে ব্যারিস্টার ইফরান ইবনে আমান নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে লড়বেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মামলা বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী রোমানা ইকবাল মাহমুদ ওই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েও এমপি নির্বাচিত হন রোমানা। কক্সবাজার-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মামলা সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ নির্বাচন করবেন। ২০০৮ সালেও হাসিনা আহমেদ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর বাইরে নেত্রকোনা-৪ এ এমপি ছিলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর। বর্তমানে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে। তার পরিবর্তে স্ত্রী তাহমিনা জামান নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া পটুয়াখালী-১ এর জন্য বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুরাইয়া চৌধুরী পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ মনোনয়ন পেয়েছেন নোয়াখালী-৫ এবং পটুয়াখালী-২ আসনে শহীদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম।

সর্বশেষ খবর