রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মৃত্যু

প্রতিদিন ডেস্ক

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মৃত্যু

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ (সিনিয়র বুশ) মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তার ছেলে জর্জ ওয়াকার বুশ এক বিবৃতিতে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর জানান। হিউস্টনে নিজ বাড়িতে বুশ মারা যান। সূত্র : রয়টার্স। রুশ-মার্কিন শীতল যুদ্ধের শেষ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেন বুশ সিনিয়র। তার শাসনামলেই প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে কুয়েত থেকে ইরাকি সেনাদের হটিয়ে দেয় মার্কিন সেনাবাহিনী, তবে তারা ইরাকে অভিযান চালায়নি। তার নির্দেশেই পানামা দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয়  মেয়াদে জন্য নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে হেরে যান। পরে তার ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০১ সাল থেকে দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে মাত্র দুজন নিজের ছেলেকেও প্রেসিডেন্ট হতে দেখেছেন। সিনিয়র বুশ বেশ আগে থেকেই পার্কিনসনস রোগে ভুগছিলেন। হাঁটার শক্তি হারানোয় তাকে চলাফেরা করতে হতো হুইল চেয়ারে, নয়ত বৈদ্যুতিক স্কুটারে। শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় সামপ্রতিক বছরগুলোকে তাকে বেশ কয়েক দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরপরই রক্তে সংক্রমণজনিত কারণে তাকে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। এ বছর এপ্রিলে এইচ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী বারবারা বুশ মারা যান।

বিশ্ব নেতৃত্বে বুশ : জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অত্যন্ত দক্ষ কূটনীতিক ছিলেন, বিশেষ করে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে। স্নায়ু যুদ্ধের শেষ দিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কুক্রফ্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকারকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা করেছিলেন তিনি। যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সিনিয়র বুশের পররাষ্ট্র নীতিকে আরেকটি বিপজ্জনক পরীক্ষায় ফেলেছিলেন ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম বাহিনী প্রতিবেশী কুয়েত আক্রমণ করে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে দেশটির সরকার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চায়। এইচ ডব্লিউ বুশ তাতে সাড়া দিয়ে ৪ লাখের বেশি মার্কিন সেনা কুয়েত পাঠান। ১৯৯১ সালে মার্কিন সেনারা ইরাকি বাহিনীকে কুয়েত থেকে বিতাড়িত করে। ওই সময় অনেকেই ভেবেছিলেন সাদ্দামকে উত্খাত করতে বুশ হয়তো বাগদাদ আক্রমণ করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে সেনাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। সিনিয়র বুশ ওই সময় কতটা দক্ষ কূটনীতিকের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার প্রমাণ দেন তার ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার আমলেই মার্কিন বাহিনী ইরাকে হামলা চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে উত্খাত করে। কিন্তু ওই যুদ্ধে যত মার্কিন সেনার রক্ত ঝরে এবং যে পরিমাণ সম্পদ ব্যয় হয়- তা হিসাব করে দেখা গেছে ওই সিদ্ধান্তই ছিল ভুল। সাদ্দামকে উত্খাতের চেষ্টা না করলেও তার আগে অফ-ডিউটিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের এক মেরিন সেনাকে হত্যা করায় এইচ ডব্লিউ বুশ পানামায় হামলা চালিয়ে তখনকার শাসক ম্যানুয়েল নোরিয়েগাকে উত্খাত করেন। এজন্য মার্কিন বাহিনী মাত্র চারদিন সময় নেয়। পরে মাদক মামলায় নোরিয়েগাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গেও নিরাপদ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সিনিয়র বুশ। ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারে বিক্ষোভরতদের উপর চীন সরকারের অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যদিও একই সঙ্গে তিনি সম্পর্কের চূড়ান্ত বিচ্ছেদও চাননি। আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংকট সমাধানের পথও তিনিই দেখিয়েছেন। তার ওই পথে অনুসরণ করেই পরে বিল ক্লিনটনের আমলে ‘অসলো চুক্তি’ হয়।

সর্বশেষ খবর