জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সে জন্য জনগণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটে বাধা দিলে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পাহারা দিতে হবে জনগণকেই। এদিন সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রে কেউ বাধা দিলে কিংবা কোনো অন্যায় করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই ধরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে সক্রিয়ভাবে দেশ শাসনে অংশগ্রহণ করতে হবে। শুধু একদিন ভোট দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। এ সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তিনি ১৯৭১ সালের মতো সমগ্র জাতিকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ড. রেজা কিবরিয়াসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি দাবি করে ড. কামাল হোসেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান। সর্বস্তরের ভোটারের উদ্দেশে এই সংবিধানপ্রণেতা বলেন, ‘আমার বিনীত নিবেদন, আপনারা কষ্ট করে নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে যাবেন। প্রত্যেক বাড়িতে যত ভোট আছে সব ভোট দেবেন। আমরা আপনাদের পুরোপুরি সহযোগিতা চাইছি।’ এ সময় তিনি দলীয় আনুগত্য ও সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশের মালিক। মালিকরা যদি তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন না করেন, তবে তারা বঞ্চিত হন। সেই দায়িত্ব মনে রেখে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, এজন্য জনসাধারণকে মালিক হিসেবে পাহারা দিতে হবে।’লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে ঐক্যফ্রন্ট বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৬৮১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর একটি তালিকা দিয়ে বলেন, এদের সবাইকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থীও রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আগের মতোই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীদেরও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের সমতল মাঠ এখনো হয়নি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
ভোটকক্ষে ছবি তোলা অপরাধ, আদালতে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট : গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ভোটের দিন ‘ভোটকক্ষের ভিতরে ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করা অপরাধ’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন বক্তব্যের বিষয়ে আদালতে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে দলীয় আনুগত্য ও ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সবাই আশঙ্কা করছেন, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দেওয়া হবে। যদি বাধা দেওয়া হয় তবে সে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা জনগণকেই রক্ষা করতে হবে। আমার অনুরোধ, ভোটারদের সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যেতে বলবেন, যেন নিজেদের ভোট দিতে পারেন।