রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা দখলের সিদ্ধান্ত নিই ৫ ডিসেম্বর

কে এম সফিউল্লাহ, বীরউত্তম

ঢাকা দখলের সিদ্ধান্ত নিই ৫ ডিসেম্বর

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ছিলাম যুবক। অল্পবয়স্ক। দেশ স্বাধীন করতে রক্ত দিতে দ্বিধা ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা আমাদের নিজ নিজ কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই সুযোগে আমাদের একটা যে ছোট প্রতিপক্ষ ছিল জামায়াতে ইসলামী, আলশামস ও রাজাকার— তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। এই সুযোগে তারাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আমাদের যে কাজটা করা উচিত ছিল, সেই কাজটা করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই কাজটাই হাতে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের যে যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বিচারের সম্মুখীন করে আমাদের ব্যর্থতা ও দায় মোচনে অগ্রসর হতে হবে। এতে তরুণ প্রজন্ম ফলপ্রসূ হবে বলে আমার বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ ডিসেম্বর আমরা সবাই ঢাকা দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়েছি। এ সময় বঙ্গোপসাগরে মার্কিনিদের সপ্তম নৌবহর আসতে থাকে। জবাবে সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অষ্টম নৌবহর প্রস্তুত রাখে। আমরা ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার আশপাশে অবস্থান করি। ১৬ ডিসেম্বর আমরা যখন চারপাশ দিয়ে ঢাকা অবরুদ্ধ করি তখন পাকবাহিনীর কমান্ডার নিয়াজি আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। এই আত্মসমর্পণে কোনো শর্ত ছিল না। আমি সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সিভিল ও মিলিটারিতে বাঙালির অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। সেনাবাহিনীতে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল ১ শতাংশের কম। ’৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) ছিল অরক্ষিত। ’৭১-এর নির্বাচনের সময় পূর্ব বাংলায় পাক ও বাঙালি সেনার উপস্থিতি ছিল সমান সমান। ’৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল সামনে রেখে পাক সেনাদের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। তাদের সেনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার একটি প্রক্রিয়াও করতে চেয়েছিল। তবে মূলত ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সেনাবাহিনীতে থাকা বাঙালি সদস্যরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ’৭১-এর মার্চ ঘনিয়ে এলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেব না বলে সিদ্ধান্ত নিই। পাকিস্তানিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিরস্ত্র করতে হবে। কিন্তু আমাদের যুদ্ধপ্রস্তুতি দেখে তারা পিছপা হতে বাধ্য হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর