মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভাকে বিদায় জানালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবন্ধীদের মেধাশক্তি কাজে লাগাতে হবে : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবন্ধীদের মেধাশক্তি কাজে লাগাতে হবে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল প্রতিবন্ধী শিশুকে জড়িয়ে আদর করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেছেন, মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য অধিকারটা আমরা যেন দিতে পারি। তাদের ভিতরে যে শক্তি আছে সেটাকে আমরা যেন কাজে লাগাতে পারি, তাই আমাদের লক্ষ্য। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৭তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২০তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এদিকে গতকাল মন্ত্রিসভাকে বিদায় জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটাই (গতকালের) বর্তমান সরকারের সর্বশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠক। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল বর্তমান মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২০তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করছে। তিনি বলেন, ‘কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। কিছুদিন পর পরই এই আন্দোলন হয়। সেজন্য আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছি, এটা ঠিক। তবে, একটা নীতিমালা তৈরি করছি।’ ‘প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী বা অনগ্রসর জাতি- তারা যেন যথাযথভাবে চাকরি পায় এবং চাকরিতে তাদের অধিকার নিশ্চিত হয়, নীতিমালায় সেই ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য কল্যাণ ফাউন্ডেশন  তৈরি এবং যারা খেলাধুলায় সম্পৃক্ত তাদের বিশেষ অলিম্পিকে সম্পৃক্ত করাসহ আরও নানা ধরনের সুযোগ আওয়ামী লীগ সরকারই করে দিয়েছিল। তারাই আমাদের জন্য স্বর্ণ জয় করে আনছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তাদের সুপ্ত প্রতিভা। কাজেই আমাদের দেশের কাজেও তারা লাগতে পারে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ নামে দুটি আইন পাস করে। এরই মধ্যে এর বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা হচ্ছে, যত স্থাপনা হবে, প্রতিটি জায়গায় প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেন থাকে। বিশেষ টয়লেটের ব্যবস্থাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সব স্থানে তাদের জন্য যেন সুযোগ-সুবিধা থাকে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দুই ঈদ, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ এবং বড়দিন উপলক্ষে যে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠান তা এই প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়েই করা হয় বলেও উল্লেখ করেন। সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৬ লাখের ওপরে প্রতিবন্ধী রয়েছে, তাদের যেমন ভাতা দেওয়া হচ্ছে, তেমনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ৭০০ টাকা করে, মাধ্যমিক স্তরে ৭৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮৫০ টাকা এবং তার থেকে উচ্চ স্তরে যারা পড়াশোনা করছে তাদের এক হাজার ২০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায় বিভিন্নমুখী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বক্তৃতা পর্ব শেষে তিনি প্রতিবন্ধীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন। ‘সাম্য ও অভিন্ন যাত্রায় প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য দিয়ে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি সায়েদুল হকও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

নবম মজুরি বোর্ডের প্রজ্ঞাপন ২৮ জানুয়ারির মধ্যে : মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সাংবাদিকদের জন্য নবম মজুরি বোর্ডের সুপারিশ পর্যালোচনায় সরকার পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দিয়েছে। সংস্কৃতিমন্ত্রীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন— শিল্পমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রী। আর মন্ত্রিসভা কমিটির কাজে সাচিবিক সহযোগিতা দেবে তথ্য মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, কমিটি আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে তাদের সুপারিশ পেশ করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নবম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটি যা চূড়ান্ত করবে সেটিই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, পাঁচটি শ্রেণিতে ১৫টি বেতনক্রম নির্ধারণ করে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথম তিন গ্রেডে ৮০ শতাংশ এবং শেষের তিন গ্রেডে ৮৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তিনি ওয়েজ বোর্ড কমিটির সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মূল বেতন ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়। আর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গত ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করে সরকার। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়। গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৮’ এর খসড়া, বীমা করপোরেশন আইন ২০১৮’ এর খসড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৮’ এর খসড়া, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন ২০১৮’ এর খসড়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম (ভূমি অধিগ্রহণ) রেগুলেশন ১৯৫৮’ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত হলো ৯ম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার বক্তৃতা সমগ্র : নবম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। দুই খণ্ডে প্রকাশিত এই সংকলনটির নাম ‘৯ম জাতীয় সংসদ : বক্তৃতা সমগ্র’। সংকলন দুটিতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণসমূহ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খবর বাসস

সর্বশেষ খবর