মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের গরম এবার উচ্চ আদালতে

আরাফাত মুন্না

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বাকি আর ২৫ দিন। সময় যত পেরোচ্ছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। মাঠ-ঘাট ছাপিয়ে এবার ভোটের গরম পৌঁছে গেছে দেশের উচ্চ আদালতেও। প্রতিদিনই নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিকার চাইতে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় আসছেন প্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা। কেউ আসছেন নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে, কেউ আবার আসছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা অপছন্দের ব্যক্তির ভোট ঠেকাতে। ভোট গ্রহণ পদ্ধতি নিয়েও হাই কোর্টে একাধিক রিট আবেদন বিচারাধীন রয়েছে। আগাম জামিন নিতে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ভিড়ও বেড়েছে অনেক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের আপিলে প্রতিকার না পেলে অধিকাংশই হাই কোর্টে আসবেন। তখন উচ্চ আদালতে নির্বাচনী উত্তাপ আরও বাড়বে। গতকাল হাই কোর্টের পৃথক কয়েকটি বেঞ্চ থেকে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদেশও এসেছে। এর মধ্যে রংপুর-৫ আসনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর মনোনয়নপত্র দ্রুত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। ভোলা-১ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রধান আন্দালিব রহমান পার্থর করা রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ। ইভিএম ব্যবহারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক একটি রিট দায়ের করা হয়েছে গতকাল। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদন গতকালই খারিজ হয়েছে হাই কোর্টে। এদিকে চাঁদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আজ হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।

রংপুর-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোননয়পত্র গ্রহণের নির্দেশ : রংপুর-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলা আমির গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র দ্রুত গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে গোলাম রব্বানীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। পরে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, ২৮ নভেম্বর বেলা ২টা ৫০ মিনিটে গোলাম রব্বানীর আইনজীবী বায়জিদ ওসমানী প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্ধারিত কার্যালয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পরও তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন বিষয়ে তাকে হয়রানি শেষে মনোনয়নপত্র গ্রহণে অপারগতা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করায় প্রতিকার চেয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো সুরাহা না পেয়ে হাই কোর্টে আসেন গোলাম রব্বানী।

ইভিএমে ভোট গ্রহণ স্থগিত চেয়ে রিট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ স্থগিত চেয়ে হাই কোর্টে রিট করা হয়েছে। সোমবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। রিটে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী। পরে এ বিষয়ে আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ জানান, ‘জনস্বার্থে আমি এ রিট আবেদনটি করেছি। রিটে ইভিএমে ভোট গ্রহণ স্থগিত চাওয়া হয়েছে। কারণ আমি মনে করি, এটা সংবিধানের ৬৫ ও ৯৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।’ এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করা হয় ৩১ অক্টোবর। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর সে অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।

ইভিএম চেয়ে পার্থর করা রিট খারিজ : জাতীয় সংসদের ভোলা-১ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রধান আন্দালিব রহমান পার্থর করা রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ভোলার জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ৩০ নভেম্বর আবেদন করেছিলেন পার্থ। সেই আবেদনে সারা না পেয়ে হাই কোর্টে আসেন তিনি।

সিইসিসহ কমিশনারদের নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নে রিট খারিজ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার কমিশনারের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। রিট আবেদনে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ-সংক্রান্ত গেজেট বাতিল চাওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর