সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গুলি মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল

মামুনুর রশীদ

গুলি মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল

বর্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে যখন এদেশের মানুষকে নির্বিচারে নৃশংসভাবে খুনের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল তখন মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে আমিও পারিনি। বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আর ঘরে বসে থাকা যাবে না। এবার প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে নিজেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে থাকি। দেশমাতৃকার শত্রুদের প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যোগ দিই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কাদেরিয়া বাহিনীতে। যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠল। দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে কাদেরিয়া বাহিনীর একজন হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম রণাঙ্গনে। পাকবাহিনীর হামলার প্রত্যুত্তরে আমরাও হামলা করলাম। কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে সফলতার সঙ্গে সেই অপারেশনটি শেষ করলাম। এরপর আমি আর কোনো অপারেশনে যোগ দিতে পারিনি। আমরা যারা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়েছি, আমাদের সেই অংশগ্রহণের পথটিও ছিল নানা প্রতিকূলতায় ভরা। দুর্গম পাহাড়, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ও নদী পার হয়ে কুমিল্লা হয়ে প্রথমে আগরতলা ও পরে সেখান থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কলকাতায় অবস্থিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের রেকর্ডিং সেন্টারে উপস্থিত হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। কুমিল্লার সিঅ্যান্ডবি ব্রিজ ছিল। সেখানে গিয়ে দুই দিন থাকতে হতো। পরে সেখান থেকে নৌকা দিয়ে যেতে হতো আগরতলায়। কিন্তু নৌকাঘাটে গিয়ে দেখলাম সব নৌকা ডুবিয়ে রেখেছে পাকবাহিনী।  সেই ডুবন্ত নৌকা পানি থেকে তুলে পানি সেচতে সেচতে আমরা আগরতলায় পৌঁছি। পরে সেখান থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে কলকাতায় পৌঁছলাম। ’৭১-এর মে মাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কাজে কলকাতায় গিয়ে আট মাস থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরে ফিরে আসি। অনুলিখন : মোস্তফা মতিহার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর