বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার প্রার্থিতা নিয়ে হাই কোর্টের বিভক্ত আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেলেও খালেদা জিয়ার ভোটের পথ ঝুলেই থাকল বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। গতকাল বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিভক্ত আদেশ দেয়। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। অন্যদিকে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে খালেদা জিয়ার রিট আবেদনগুলো খারিজ করে দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাকে সহায়তা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু দুজন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। আইনগত অবস্থা যা দাঁড়াল, এখন পর্যন্ত উনি (খালেদা জিয়া) কোনো আদেশপ্রাপ্ত হননি। তিনি বলেন, দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না— এটা মীমাংসিত বিষয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই পক্ষপাতিত্ব করছে, ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে এসেছিলাম। প্রিসাইডিং জাজ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তিনটি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও বেঞ্চের অন্য বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী এ মামলার নথিপত্র এখন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতারা আশা করছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী তাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। হাই কোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়। এর ফলে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আটকে যায়। এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাই কোর্টে।

সর্বশেষ খবর