বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়নে ভোট দিন নৌকায়

গোপালগঞ্জে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি ও আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ থেকে

উন্নয়নে ভোট দিন নৌকায়

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গতকাল আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভার একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরেকবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিন। যাকে যেখানে প্রার্থী করেছি, সেখানে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।

গতকাল বিকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুত্ফর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রথম নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ আহ্বান জানান। গতকাল সকাল ৮টায় গণভবন থেকে সড়ক পথে রওনা হয়ে দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ করেন তিনি। এরপর দুপুরের খাবার ও বিশ্রাম শেষে বিকাল ৪টায় ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে কোটালীপাড়ায় জনসভায় উপস্থিত হন তিনি। মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। জনসভা মঞ্চের আকর্ষণ ছিলেন চিত্র নায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস। রুপালি পর্দার দুই নায়ক সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট পরে দেওয়া বক্তৃতায় জনগণের কাছে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। সারা দেশের মতো গোপালগঞ্জ জুড়েও নির্বাচনী আমেজ চলছে। পুরো নির্বাচনী এলাকা মুখরিত ছিল নৌকা, নৌকা স্লোগানে। নির্বাচনী জনসভায় অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণ ছিল নারীদের। জনসভায় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাকে জনগণের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য বারবার অনুরোধ জানালেও তিনি বক্তব্য রাখেননি। বলেন, আমার হয়ে আমার বড় বোন সারা দেশে বলে যাচ্ছেন। আমার আর কিছু বলার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ বঞ্চিত হয় না। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আজকে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে পারে। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে যেন চলতে পারে, আমি সেই সুযোগ দেশবাসীর কাছে চাই। তিনি বলেন, মা বোনদের বলব, আপনাদের অধিকারের জন্য অনেক কিছু করে দিয়েছি। শিক্ষা-দীক্ষায়, কর্মসংস্থান সব দিক থেকে আপনারা এগিয়ে গেছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ বঞ্চিত হয় না। আমার এই কথাটা আপনারা সবার কাছে পৌঁছে দেবেন।

তিনি স্থানীয় জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে জাতির পিতার মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে কোটালীপাড়া থেকে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করলাম। কারণ আপনারাই আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাবা-মা হারিয়ে আমি আপনাদের মাধ্যমেই আপনজন খুঁজে পেয়েছি। বারবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, সব প্রার্থীই নিজ এলাকায় থেকে কাজ করে। আমি আপনাদের সময় দিতে পারিনি। সমস্ত বাংলাদেশের তিনশ আসন আমাকে দেখতে হয়। আমি আপনাদের কাছে দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। আপনারা আমার আপনজন হিসেবে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকায় ভোট চাইবেন। আবারও নির্বাচিত করবেন। পিতৃভূমির হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো আপনজন নেই। একমাত্র ছোটবোন, আর আপনারাই আমার আপনজন। বক্তৃতার শেষে তিনি বলেন, যাওয়ার বেলায় বলে যাই, নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। কোটালীপাড়ায় তাঁকে হত্যার জন্য পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি বোমার কথাও স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গোপালগঞ্জের মানুষই বোমা পুঁতেছিল। আর যেই কিশোর চা দোকানদার এ বোমা আবিষ্কার করেছিল সে-ও গোপালগঞ্জের। আমি নিশ্চিত, এ জনসভার কোথাও না কোথাও সে উপস্থিত আছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুপূর্ণ। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। বাংলাদেশ আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের দোসরদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, নৌকায় ভোট দিয়ে তাদের উপযুক্ত জবাব আপনাদের দিতে হবে। তাই কোটালীপাড়ার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে আমরা আহ্বান জানাব, ২০২১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব, তখন যেন ওই স্বাধীনতার বিরোধী, অগ্নিসন্ত্রাসকারী, খুনি, রাজাকাররা ক্ষমতায় না আসে। তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে। শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের প্রথম নির্বাচনী সভা। সুতরাং এই সভা থেকে আমি সমগ্র দেশবাসীর প্রতি এই আবেদন জানাই, আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই, জনগণের সেবা করতে চাই। দেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। কাজেই আমি সবার সাহায্য চাই, দোয়া চাই। তিনি বলেন, আমার গ্রাম আমার শহর হিসেবে গড়ে ওঠবে। প্রতিটি ঘর হবে আলোকিত। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি জেলায় একটি স্কুল ও একটি করে কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। অবহেলিত কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কারও কাছে মাথানত করে চলবে না। মর্যাদাপূর্ণ দেশ নিয়ে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সাবেক মেয়র এইচ এম ওহিদুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদার প্রমুখ। সভামঞ্চে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : টুঙ্গিপাড়া পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার কবর জিয়ারত করেন। সকাল ৮টায় তিনি গণভবন থেকে বের হয়ে মাওয়া হয়ে সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান। যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের হাতে ছিল নৌকা ও দলীয় সভানেত্রীর ছবি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এ সময় গাড়ির ভিতর থেকে নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর