শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটে সেনা ১০ দিন, চলছে ব্যালট ছাপানোর কাজ

সেনা নামছে ২৪ ডিসেম্বর, ২২ তারিখ থেকে বিজিবি, সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা নেই, ভোট কক্ষে মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটে সেনা ১০ দিন, চলছে ব্যালট ছাপানোর কাজ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন চলছে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ। এবার ভোটের সাত দিন আগে মাঠ পর্যায়ে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেবে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভোটের সময় সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা থাকবে না, তবে লাইভ দেখানোর ব্যাপারে নির্দেশনা আরও পরে আসবে। মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আসবে।

সূত্র জানায়, আগামী ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিনের জন্য তারা মোতায়েন থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটের ছয় দিন আগে মোতায়েন হবে সেনাবাহিনী; ভোটের পরও দুই দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে থাকবে তারা। সেইসঙ্গে বিজিবি সদস্যদের ১২ দিনের জন্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২২ ডিসেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর মাঠে থাকবে তারা। সেই সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে ৬ দিনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর নিয়োজিত রাখা হবে তাদের। আর ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা সদস্যদের ভোটের দুই দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর থেকে মোতায়েন করা হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ভোটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। শুধু বাকি প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ। ভোটের সাত দিন আগে ব্যালট পেপার নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো হবে।

ভোটে সেনা ১০ দিন : নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। গতকাল আগারগাঁয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী মাঠে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে তিন ধরনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৫২ জন, সিনিয়র জেলা জজ থাকবেন ২৪৪ জন। আর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৪০। তারা নির্বাচনের ২ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত মোট চার দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া এক হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিজিবি, র্যাব, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এরাই মূলত ভোটের মাঠে বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে আলাদা কোনো বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অভিযোগের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, প্রতিটি অভিযোগই আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। আমলে নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠাচ্ছি। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছেও পাঠাচ্ছি। তারা এসব বিষয় তদন্ত করে দেখছে। বেশ কয়েকটি তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতেও এসেছে। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই। আর যে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইসি সচিব বলেন, কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, যদি কোনো পেন্ডিং ওয়ারেন্ট থাকে এবং তা তামিলে আদালতের কোনো তাগিদ থাকে তাহলে তাদের গ্রেফতার করা যাবে। আসলে ওয়ারেন্টভুক্তরা অনেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। এখন ভোটের মাঠে তারা দৃশ্যমান হয়েছেন। এ কারণে হয়তো পুলিশ তাদের ধরছে বা ধরার চেষ্টা করছে।

ইসি সচিব বলেন, সাংবাদিকদের জন্য কোনো নীতিমালা ইসির নেই। গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা থেকে সাংবাদিকদের জন্যও একটা নীতিমালা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কমিশনাররা বলেছেন, সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। ছবি তুলতে পারবেন। এমনকি ভোটারদের মতামতও নিতে পারবেন। এসব ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানাব। ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কমিশনে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে ইসি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে যে, ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে ফোন থাকবে এবং পুলিশ ইনচার্জ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যদের কাছে ফোন থাকতে পারে, তবে তারা ভোট কক্ষে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন। তবে তা কেন্দ্রের ভিতরে ব্যবহার না করে বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন। ভিতরে ব্যবহার করলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন তারাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে উৎসাহী হতে পারেন। এ ব্যাপারে একটা বিধি-নিষেধ থাকা প্রয়োজন।

সচিব বলেন, ভয়টা কোনো বিষয় নয়। এটা হলো যে, নির্বাচনকে যেন কেউ বানচাল না করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। আপনি জানেন, এবার একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ গ্রহণ করছে। একটি রাজনৈতিক সরকার আছে। সব কিছু মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর