রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নয়

ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলা দুঃখজনক : সিইসি পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পদক্ষেপ চায় ঐক্যফ্রন্ট, প্রচারে বাধার অভিযোগ বাম জোটের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নয়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা রাখার স্বার্থে ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটের মাঠে জোর প্রচারণার মধ্যে সব দল ও প্রার্থীর জন্যে সমান      সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ভোটকক্ষের ভিতর থেকে কোনোভাবে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। টেলিভিশন, অনলাইন, মোবাইল বা ক্যামেরায় হোক— সরাসরি সম্প্রচার যেন না করা হয়— সে বিষয়ে অনুরোধ করছি। তবে ভোটকক্ষের মধ্যে ছবি বা ভিডিও করতে কোনো বাধা নেই। বৈঠকের পর ইসির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জানানো হয়, এবারের ভোটে ৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থী। ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রচারে রয়েছেন তারা। অন্য নির্বাচনের মতো ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে। কেন্দ্রের চৌহদ্দি বলতে অন্তত ৪০০ গজ এলাকাকে বোঝানো হয়। ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি ভোটারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৫ হাজারেরও বেশি ভোটকক্ষ রয়েছে। এ সময় সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে নূরুল হুদা বলেন, ভোটকক্ষের ভিতরের দৃশ্য ধারণ করে ও ছবি তুলে ভেটকক্ষের বাইরে বারান্দা বা মাঠের যে কোনো স্থান থেকে সরাসরি সম্প্র্রচারে কোনো বাধা নেই। ভোটকক্ষের ভিতরে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্টরা থাকেন; সেই সঙ্গে একদল সাংবাদিক সরাসরি সম্প্রচারে গেলে ভোট দেওয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। সব বিবেচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে সিইসি বলেন, সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও মোবাইলের মাধ্যমে ছবি তুলতে বাধা নেই। তবে ভোটকক্ষের ভিতরে কথা বলা যাবে না। ছবি তোলা শেষ করে বাইরে এসে এসে কথা বলতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে : ভোটের মাঠে জোর প্রচারণার মধ্যে সব দল ও প্রার্থীর জন্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। সিইসি বলেন, প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারছেন; কোনো বাধা নেই। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে; নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে, তদন্ত হবে। পরিস্থিতি জেনে আমরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। সেনাবািহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করতে পারবে কিনা- জানতে চাইলে সিইসি জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাহী হাকিমের নির্দেশে প্রচলিত আইনে তারা দায়িত্ব পালন করবে। সিআরপিসি অনুযায়ী তারা কাজ করবে। কামালের ঘটনা দুঃখজনক : ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। সিইসি বলেন, এটা দুঃখজনক। তিনি একজন সিনিয়র সিটিজেন, প্রখ্যাত ব্যক্তি। তার ওপর হামলা কখনো প্রত্যাশিত নয়। এটা ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। তারা আমাদের কাছে এ নিয়ে আবেদন করেছে। বিষয়টি তদন্তে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে তা পাঠানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপিকে ফের চিঠি দেবে ইসি : বিএনপি নেতা-কর্মীদের অহেতুক হয়রানি, গ্রেফতার না করায় আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান সিইসি। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই তাদেরকে যেন অহেতুক হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। হামলার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ নিয়ে চিঠি দিয়েছেন দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান। বিএনপির বিভিন্ন দাবি নিয়ে লিখিত চিঠি ইসি সচিবের কাছে দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এতে বলা হয়, ‘মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে কামাল হোসেনের ওপর হামলার বিষয়টি অবহিত করে চিঠিতে বলা হয়, ফেরার সময় কামাল হোসেন ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলা করা হয় এবং গাড়ি বহরের ৭-৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আ স ম আবদুর রবের গাড়ি চালকসহ ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। সন্ত্রাসী হামলার জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে সন্ত্রাসী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে ইসির কঠোর নির্দেশনার দাবি জানাচ্ছি।’  বাম জোটের প্রচারণায় বাধার অভিযোগ : সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের অন্তত ১০টি আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও পুলিশি বাধার অভিযোগ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিত চিঠিতে এসব অভিযোগ জানান। এতে ঢাকা-৬, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৭, পটুয়াখালী-৪, কুষ্টিয়া-৩, সাতক্ষীরা-১, জামালপুর-২ ও দিনাজপুর-৪ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, সরকার দলের কর্মীদের হামলা ও পুলিশি বাধার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সর্বশেষ খবর