শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ বাংলাদেশে আসছেন আল আকসা মসজিদের ইমাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল-আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাসের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ আহমেদ হোসেন আজ (শুক্রবার) বাংলাদেশে আসছেন। রাশিয়াভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন ও ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের আমন্ত্রণে তার এই সফর। সফরকালে তিনি এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেবেন। সেমিনারের আয়োজক ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ড. কাজী এরতেজা হাসান জানান, গ্র্যান্ড মুফতির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন।

গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ আহমেদ হোসেনের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। তার মতো বুজুর্গ ব্যক্তির আগমনে ইসলামপ্রিয় দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত হবে। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে নতুন করে সেতুবন্ধুন তৈরি হবে। মুসলিম উম্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। উল্লেখ্য, বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা এবং মক্কা-মুআয্যামাহ ও মদিনা মুনাওয়ারার পরে তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রসুলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। হিজরতের পর বায়তুল মুকাদ্দাসই ছিল ইসলামের প্রথম কিবলা। এ পবিত্র ঘর থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গিয়েছিলেন। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রসুলের মাজার। ওহি ও ইসলামের এ নগরী নবীগণের দ্বীন প্রচারের কেন্দ্রভূমি। তাই এ পবিত্র নগরীর প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। হজরত ইবরাহীম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে, হজরত সুলায়মান (আ.) এই পবিত্র মসজিদের পুনঃনির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর আমলে পুরো বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম শহর পুনরায় মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর খ্রিস্টশক্তি পিছু হটলেও ইহুদিচক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের ওপর লোলুপ দৃষ্টি রাখে। তারা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে সুদূর মদিনা পর্যন্ত গোটা মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে। তারা তাদের বদমতলব বাস্তবায়নের জন্য তুরস্কের তৎকালীন শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে জমি কেনার অনুমতি চায় এবং এর বিনিময়ে তারা তুরস্কের বিদেশি সব ঋণ পরিশোধ করে দেবে বলে অঙ্গীকার করে। সুলতান তাদের এ ষড়যন্ত্রমূলক প্রস্তাব মানেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইহুদিরা গোপনে জমি কিনতে থাকে। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সালে সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং স্যার হার্বাট স্যামুয়েল নামক একজন ইহুদিকে সেখানে ব্রিটিশ কমিশনার নিযুক্ত করে। এই জমি কেনায় বহিরাগত ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনের দুয়ার খুলে যায়। আমেরিকা ইহুদিবাদী উগ্র সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনে বসবাস ও জমি কেনার জন্য কোটি কোটি ডলার  দেয়। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যে বহু সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ইহুদির সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে আরব মুসলমানদের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইহুদিরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের কচুকাটা করতে থাকে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। তখনো বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল। কিন্তু আরবদের দুর্বলতার মুখে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তা হাতছাড়া হয়। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আবাসভূমি ও আল-কুদ্স (বায়তুল মুকাদ্দাস) উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর