শিরোনাম
রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আরও পাঁচ বছর দেশ চালাতে চাই

গৌতম লাহিড়ী, দিল্লি ফিরে

আরও পাঁচ বছর দেশ চালাতে চাই

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জনগণের জন্য কাজ করি। তাদের জন্য সুন্দর জীবন গড়তে চাই। এদেশকে গরিব থেকে সমৃদ্ধ একটা দেশে উন্নীত করতে চাই। আমার বাবার স্বপ্নও ছিল তা-ই। এ জন্য আমরা আরও পাঁচ বছর দেশ চালাতে চাই। তবে এটা জনগণের ওপর নির্ভর করে। তারা আমাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিলেই আমি আশ্বাস দিতে পারব যে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের জন্য নিরাপদ একটি স্থান। সমৃদ্ধ একটি দেশ। তিনি বলেন,  জঙ্গি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পড়শি দেশসহ কোনো দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য এ দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেব না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যগুলো পূরণ করাটা আমার স্বপ্ন।

গত সপ্তাহে ঢাকায় ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বেসরকারি বাসভবন ‘সুধাসদন’-এ তার এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করি আমি। এ সময় ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি আমি গৌতম লাহিড়ী ছাড়া আরও তিন ভারতীয় সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে ভারতীয় সাংবাদিক দলের সঙ্গে এটাই ছিল তার প্রথম সাক্ষাৎকার। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় চল্লিশ মিনিট কথা হয়। তিনি নির্বাচন, রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নিয়ে সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সেই কথোপকথন তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এক নিরাপদ জায়গা- সংসদ নির্বাচনের পর আপনি কি এভাবে আশ্বস্ত করতে পারবেন?

শেখ হাসিনা : এটা জনগণের ওপর নির্ভর করে। তারা আমায় ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিলেই আমি আশ্বাস দিতে পারব যে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের জন্য নিরাপদ একটি স্থান। জঙ্গি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আর বিচ্ছিন্নতাবাদী- এদেরকে পড়শি দেশসহ কোনো দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করতে আমি দেব না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যগুলো পূরণ করাটা আমার স্বপ্ন। এ জন্য বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। বেশকিছু কাজ শুরু হয়েছে, যেমন পদ্মা সেতু নির্মাণ। এসব কাজ শেষ করতে হবে। ঘটনাক্রমে অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় গেলে আশঙ্কা হয়, বাংলাদেশ আবার অনুন্নয়নকবলিত হবে। আমি শুধু চাই, গেল ১০ বছরে যেসব উন্নয়ন ঘটেছে সেগুলো যেন হারিয়ে না যায়। সে জন্যই রাজনৈতিক সুস্থিতি অটুট থাকা চাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, গণফোরাম ও সুপরিচিত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে এবার প্রথম নির্বাচন করছে। এটা আপনার সাফল্য বলবেন?

শেখ হাসিনা : (সহাস্যে) এটা আপনার মূল্যায়ন। রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা নির্বাচনে শামিল হয়েছে। নির্বাচনে আসতে তাদের আমি রাজি করিয়েছি। আপনারা জানেন, গত সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। তারা ভয়ঙ্কর সব কাজ করেছে। তারা বিস্ফোরক ছুড়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়েছে। বাস, কার, গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে। ৩৯শর বেশি গাড়ি তারা পুড়িয়েছে তখন। তাদের এই কৌশল জনগণ মেনে নেয়নি। মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে তারা যেসব দফতর চায় সেগুলোও তাদের দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম আমি। তারা প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল। এবার তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট করেছে। এরপর আমার সঙ্গে সংলাপে বসবার প্রস্তাব দেয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাবটি মেনে নিলাম। ওদের দাবি অনুসারে, ওদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে সাধারণ নির্বাচন এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানাই আমি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধী হিসেবে পরিচিত কিছু  লোককে প্রার্থী করেছে বিরোধীদল। এটা আপনার জন্য সহজে জেতার সুযোগ, নাকি চ্যালেঞ্জ?

শেখ হাসিনা : (সহাস্যে) দুটোই। বিরোধী শিবিরে যা ঘটেছে বস্তুত তা হাস্যকর। বিএনপির জাতীয় নেতৃত্বকে প্রার্থী বাছাই করতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করেছেন। এটা ছিল প্রার্থিতার প্রকাশ্য নিলাম। নির্বাচন-নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত। এদেরকে এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের প্রার্থী মনোনীত করেছেন এই ভদ্রলোক। এদেশের মানুষ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে দিতে পারে না। তাই আমার মতে, আসন্ন নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি আর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির লড়াই। দেশের জন্য আবারও একটা হুমকি ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ কি ফের অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে? আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। তারাই আমার শক্তি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেখলাম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আপনি সমাবেশ করছেন। এসব সমাবেশে আপনি কী বলে থাকেন?

শেখ হাসিনা : ঠিকই দেখেছেন। এই প্র্যাকটিস আমি গত সংসদ নির্বাচনের সময় শুরু করেছিলাম। এবারে করছি বড় আকারে। আজ আপনারা দেখেছেন আমি এই বাড়ি থেকে কিশোরগঞ্জ ও বান্দরবানে বক্তৃতা করছি। দুটো জায়গাই এখান থেকে বেশ দূরে। থ্রি-জি ব্রডব্যান্ড আর ইন্টারনেট কানেকটিভিটি উন্নত হওয়ায় এভাবে বক্তৃতা করলাম। বাংলাদেশ যে ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত, এটা কি তার প্রমাণ নয়? আপনারা তো দেখছেনই যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখন আবহাওয়া খারাপ। আমি সবখানে যেতে পারছি না। বৈরী আবহাওয়া  সত্ত্বেও আমাদের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সহায়তা করছে ডিজিটাল-সজ্জিত বাংলাদেশ। এতে করে এমনকি আমাদের সমালোচক বিরোধীদলগুলোও লাভবান হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশের সময় আপনার সরকারের পাঁচ বছরে হওয়া ভুলত্র“টির জন্য ক্ষমা চাইলেন। কেন?

শেখ হাসিনা : সবাইকে তো সন্তুষ্ট করা যায় না। বড় দল আর মন্ত্রিসভা হলে যা হয় আর কি। আমরা মানুষ। মানুষের ভুল হবেই। এসব ভুল জনগণ মেনে নেয় কিনা দেখতে হয়। আমি জনগণের জন্য কাজ করি। তাদের সুন্দর জীবন গড়তে চাই। এদেশকে গরিব থেকে সমৃদ্ধ একটা দেশে উন্নীত করতে চাই। আমার বাবার স্বপ্নও ছিল তা-ই। আমাদের জনগণ খুবই উদার। আমরা আরও পাঁচ বছর দেশ চালাতে চাই। আমি মনে করি, কোনো ভুল আমরা করে থাকলে ক্ষমা চাওয়া উচিত। [বাকি অংশ আগামীকাল]

সর্বশেষ খবর