মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কামরাঙ্গীরচরে বিশাল জনসভা

সরকারের ধারাবাহিকতা জরুরি : শেখ হাসিনা

উন্নয়নের একগুচ্ছ পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের ধারাবাহিকতা জরুরি : শেখ হাসিনা

কামরাঙ্গীরচরে গতকাল জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ১০ বছরের উন্নয়ন আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের ফের ক্ষমতায় আসা দরকার। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর হাসপাতাল মাঠে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (দক্ষিণ) আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল ছিল সশরীরে উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনার সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভা। এই জনসভা মাঠটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বেলা ১১টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যে জনসভাস্থলে মানুষের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৮টি নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা-২ আসনের কামরুল ইসলাম ও ঢাকা-৭ আসনের হাজী মোহাম্মদ সেলিমের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। জনসভার মাঠে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়। মানুষ কিছু পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারা জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তারা শুধু নিতে পারে। তিনি বলেন, পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসায় আজকে উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী, হাজী সেলিম, হাবিবুর রহমান মোল্লা, মহাজোটের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশিদ, যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুবলীগ ঢাকা মহনগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট, ছাত্রলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ প্রমুখ। ক্ষমতায় ফিরলে ঢাকায় পাতাল রেল : আরেকবার ক্ষমতায় আসলে রাজধানীতে পাতাল রেল নির্মাণসহ যানজট নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মসূচি হলো ঢাকায় আমরা পাতাল রেল নির্মাণ করব।  আগামীতে ক্ষমতায় আসলে ঢাকা শহর ঘিরে আমরা একটা রিং রোড তৈরি করব, যা হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। এতে দ্রুতগামী সব যানবাহন চলতে পারে। ঢাকা শহর ঘিরে পাঁচটি নদীর নাব্য ফেরাতে খনন করা হবে এবং নদীগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে। উন্নয়ন চালু রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা জরুরি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভবন করে আরও উন্নত করতে মহাপরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ডিজাইনও আমি দেখে রেখেছি। কামরাঙ্গীরচরে বস্তিবাসীদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেবল বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে এটা আমি চাই না। আমি চাই না বস্তিতে কেউ মানবেতন জীবনযাপন করুক। কামরাঙ্গীরচরে অনেক বস্তি আছে। আগামীতে সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে এখানে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। লাঙ্গলকে নৌকায় তোলার ঘোষণা : জনসভায় ঢাকা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-৭ আসনে নৌকার প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা-৮ আসনে রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপু ও ঢাকা-১০ আসনের শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনী প্রচারণায় থাকায় এই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন না। ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাজী ফিরোজ রশিদ যদিও ছাত্রলীগ করেছিলেন, এখন করেন জাতীয় পার্টি। আগে করতেন নৌকা, এখন গেছেন লাঙ্গলে। কোনো অসুবিধা নাই, ভবিষ্যতে আমরা লাঙ্গল নৌকায় তুলে নেব। ঢাকা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের মহাজোটের প্রার্থী, তাই সেখানে নৌকার প্রার্থী দেই নাই, তাই লাঙ্গল মার্কাকে মহাজোটের মার্কা হিসেবে বাবলাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছি। ‘ঢাকা-৭ আসনের হাজী সেলিম জনপ্রিয় একজন নেতা। যদিও অসুস্থ, তারপর আমরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছি। আমরা চাই জনগণের সেবা সব সময় তিনি করে যান। শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহর ঘিরে ৫টি নদী খনন করে তার নাব্য ফিরিয়ে এনে সেটার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করা হবে।

আরও সাত জেলায় ভিডিও কনফারেন্স : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরও ৭টি জেলায় নির্বাচনী জনসভা ও প্রচার কার্যক্রমে অংশ নেবেন। আগামীকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ, চাঁদপুর হাসান আলী স্কুলমাঠ এবং নওগাঁয় নওজোয়ান মাঠে এবং পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে কুমিল্লা টাউন হল ময়দান, টাঙ্গাইল পৌর উদ্যান, যশোর টাউন হল ময়দান এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী প্রচার কর্মসূচিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। পরে তিনি বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে বড়দিনের কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগীত এবং অন্যান্য  দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।

সর্বশেষ খবর