সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোথাও ভোট সুষ্ঠু হয়নি

ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি কারও মুখে কোনো আনন্দ উল্লাস দেখছি না, নির্বাচনে যেটা হওয়া উচিত ছিল। যে খবর পাচ্ছি, তা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, যে ভোটাধিকারের জন্য এক দিন আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, স্বাধীনতার এত বছর পর সেই ভোট ছিনতাইয়ের নির্বাচন দেখতে হলো আমাদের। এর চেয়ে কষ্টদায়ক আর কী হতে পারে। নির্বাচনের নামে প্রহসন চলেছে। মানুষের মতো এবার ভোটও গুম করা হয়েছে। আমি হতাশ, ক্ষুব্ধ। জীবনে এমন নির্বাচন আর কখনো দেখিনি। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল পৌনে ৯টায় স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন এবং দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা ন্যূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন ড. কামাল হোসেন। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশ থেকে যে খবর আসছে, তা উদ্বেগজনক। বেশির ভাগ জায়গায় বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। এ খবর সত্যি দুঃখজনক।

এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, মিনিটে মিনিটে চারদিক থেকে টেলিফোন আসছে। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এমন অবস্থা আমরা আশা করিনি, আশা ছিল অন্তত কোনো একটা কেন্দ্র থেকে কেউ বলবে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সে রকম কোনো খবর আমি পাইনি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ভোটের এই চিত্র দেখব আশা করিনি। ভোটের মাঠে যে আনন্দ-উল্লাস করার দরকার ছিল, সেটি আমরা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, ভোটের নামে সারা দেশে তা ব চলেছে। সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা জোর করে দখল করে নিয়েছে। সরকারি দল এত সন্ত্রাসী কোথা থেকে এনে জড়ো করল, জানা দরকার।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, এটাকে ভোট বলে না। ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতির চেয়েও কঠিন কোনো শব্দ থাকলে তা বলতে হবে। কারণ এসব পুরনো শব্দ। মানুষের মতো এবার ভোটও গুম করা হয়েছে। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই ধ্বংস করা হয়েছে। এরকম একটি ভোট দেখার জন্য ’৭১-এর ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হয়নি। স্বাধীনতার জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দেয়নি। ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা কথায় কথায় স্বাধীনতার মূল্যবোধের কথা বলেন, এটাই কি সেই মূল্যবোধ। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করাই কি তাদের স্বাধীনতার শিক্ষা। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, একটি কেন্দ্রে আমার পাঁচজন মহিলা পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তাদের মারধর করার পরও কিছুক্ষণ থাকেন তারা। এরপর তাদের যখন বের করে দেওয়া হয়, তখন তারা র‌্যাবের কাছে সহযোগিতা চান। র?্যাব তাদের ভোটকেন্দ্রে না নিয়ে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়। এক বিভীষিকাময় নির্বাচন অতিক্রম করছি আমরা। আমরা অসহায় জনগণের কাছে ক্ষমা চাই। কারণ আমরা তাদের কাউকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। কাউকে ভোটের একটা স্লিপও দিতে পারিনি।

ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভয়াবহ। লাঠিয়াল বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। কিছু কিছু প্রিসাইডিং অফিসার পোলিং এজেন্টদের নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই আসনে যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে আমরা ভেবেছিলাম সেখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তা পরিচালিত হবে, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু ভোটারদের কাউকে কাউকে ইভিএম কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ভোটার ইভিএম মেশিনের সামনে পৌঁছাতে পারলেও মেশিন ওপেন হওয়ার পর লাঠিয়াল বাহিনী তাদের বের করে দিয়েছে। বলেছে, আপনাদের আর কষ্ট করতে হবে না। বিভিন্ন কেন্দ্রে বলা হচ্ছে- এখানে শুধু একটি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকবে, সেটি হচ্ছে নৌকা। অন্য কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকতে পারবে না বলে সবাইকে বের করে দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক

এর আগে সকালে ড. কামাল হোসেন বলেন, সারা দেশে  ভোটের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গতকাল সকাল ৯টায় বেইলি  রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট  দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জায়গায় জায়গায় যে খবরগুলো পাচ্ছি, এটা উদ্বেগজনক। এগুলো খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক।

গণফোরাম সভাপতি আরও বলেন, মিনিটে মিনিটে টেলিফোন কল আসছে যে, ‘কামাল ভাই আমাদের এখানে রাতেই হয়ে  গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে গেল।’ এভাবে ভোটকেন্দ্র দখল ও ভোট দিতে বাধা দেওয়াকে একাত্তরের শহীদ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ‘বেইমানি’ বলে মন্তব্য করেন কামাল হোসেন। প্রাপ্ত অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকেও দেওয়া হবে বলে জানান ভোটের আগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর