মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোটের মাঠে ছিল ৩৯ টিকল মাত্র ৯ দল

গোলাম রাব্বানী

ভোটের মাঠে ছিল ৩৯ টিকল মাত্র ৯ দল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে টিকে গেল ৯টি। ২৯৮ আসনের বেসরকারি ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে। দলটি ২৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয় পেয়েছে ২৫৯ আসনে। জাতীয় পার্টি ১৭৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয়েছে ২০ আসনে। এ ছাড়া বিএনপি ২৫৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয়েছে ৫ আসনে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে গড়ে ৮০% ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ইভিএমের ছয় আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২৫৯টি আসন, আর মহাজোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। ১৪-দলীয় জোটের দলগুলোর মধ্যে জাসদ ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, বিকল্পধারা ২টি ও তরীকত ফেডারেশন ১টি আসনে জিতেছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের মিত্র দল জাতীয় পার্টি (জেপি) বাইসাইকেল প্রতীকে ১টি আসনে জিতেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপি ৫টি আসনে জিতেছে আর গণফোরাম জিতেছে ২টি আসনে। সব মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭টিতে। এ ছাড়া ৩টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা; তাদের দুজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, আরেকজন খালেদা জিয়ার আসনে বিএনপির সমর্থন পেয়েছিলেন। ৩০ ডিসেম্বর রবিবার ২৯৯ আসনে অনুষ্ঠিত এই ভোটের ফলাফলে নৌকার অভাবনীয় জয়ের বিপরীতে ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে আসা বিএনপির। সব মিলিয়ে মাত্র ৭টি আসনে জয় পেয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা; তাদের চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি ২০টি। লাঙ্গল প্রতীকে জয়ী ২০টি আসন নিয়ে দৃশ্যত আবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে এইচ এম এরশাদের দল। এমনটা হলে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি এবার ভোটে অংশ নিলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ফিরতে পারছে না।

কোন দলের কত আসন : আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসন, বিএনপি ৫টি, জাসদ ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, বিকল্পধারা ২টি, তরীকত ফেডারেশন ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি ও গণফোরাম ২টি আসনে জিতেছে। ৩টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

ভোট পড়েছে ৮০ ভাগ : একাদশ সংসদ নির্বাচনে গড়ে ৮০% ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। গতকাল নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানান তিনি। রবিবার ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় ২৯৮ আসনের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিন কেন্দ্রে পুনঃ ভোট হওয়ার সিদ্ধান্তে ফল আটকে রয়েছে। আর গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি।

ভোটের মাঠে ছিল আওয়ামী লীগের ২৬০, বিএনপির ২৫৭ প্রার্থী : একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যালটে ছিল ১ হাজার ৮৬১ প্রার্থীর নাম। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজারর ৭৩৩ জন; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র। আদালতের নির্দেশনার পর ধানের শীষের প্রার্থী ১৫ জন কমলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বেড়েছে ২৯ জন। আওয়ামী লীগ ও শরিকদের মিলিয়ে নৌকার ২৭২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিল। তাদের বিপরীতে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি ও শরিকদের প্রার্থী সংখ্যা ২৮২। সবচেয়ে বেশি ২৯৮ জন প্রার্থী ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে।

কোন দলের কত প্রার্থী ছিল : এলডিপি ৮ (ধানের শীষ ৪), জেপি ১১ (মহাজোট ২), সাম্যবাদী দল ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৮ (ধানের শীষ ৪), সিপিবি ৭৪, আওয়ামী লীগ ২৬০ (নৌকা ২৭২), বিএনপি ২৫৭ (ধানের শীষ ২৮২), গণতন্ত্রী পার্টি ৬, ন্যাপ ৯, জাতীয় পার্টি ১৭৫ (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারা ২৬ (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ (নৌকা ৫), জাসদ ১১ (নৌকা ৩), জেএসডি ১৯ (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টি ৯০, বাসদ ৪৪, বিজেপি ৩ (ধানের শীষ ১), তরীকত ফেডারেশন ১৭ (নৌকা ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২৪, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৪৮, এনপিপি ৭৯, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৮ (ধানের শীষ ৩), গণফোরাম ২৮ (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্ট ১৩, পিডিপি ১৪, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১১, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৮, কল্যাণ পার্টি ২ (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোট ২৫, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৯৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২৫, জাগপা ৪, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮, খেলাফত মজলিস ১২ (ধানের শীষ ২), বিএমএল ১, মুক্তিজোট ২, বিএনএফ ৫৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন।

ইভিএম আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৫.৮২ ভাগ : সংসদ নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টিতে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ইভিএম আসনগুলোতে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এসব আসনের মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৫টি। ব্যালট পেপারের ভোটগ্রহণের হার গড়ে ৮০ ভাগ হলেও ইভিএমের ৬ আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

ইভিএম আসনে ভোটের হার : রংপুর-৩ আসনে গড় ভোট পড়েছে ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ঢাকা-৬ আসনে ৪৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সাতক্ষীরা-৩ আসনে ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ, খুলনা-২ আসনে ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ঢাকা-১৩ আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

 

সর্বশেষ খবর