বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে জি এম কাদের

শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা কম

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা কম

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে শক্তিশালী বিরোধী দল রাখা দরকার।

গতকাল বনানীতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। গত ৩০ ডিসেম্ভবরের নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

জি এম কাদের বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বেশিরভাগ আসন সংখ্যা সরকারি দলের পক্ষে চলে গেছে। সংবিধানের ৭০ ধারা অনুযায়ী সরকারি দলের প্রতিনিধিদের সরকারের পক্ষেই কথা বলতে হয়। আমরাও সরকারি দলের সঙ্গে নির্বাচন করেছি। সে হিসেবে জাতীয় পার্টিও সরকারের অংশ। তিনি বলেন, প্রচারণায় সরকারের অংশ হিসেবে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেশবাসীকে দিয়েছি। আমাদের পক্ষে শক্তিশালী বিরোধী দলের ঘোষণার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এর বাইরে যে অংশটি থাকবে তা নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা সম্ভব নয়। জনগণের ভোটের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে আপনাকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্তে আমি খুশি হয়েছি। ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টির মতো বৃহৎ দলের নেতৃত্বে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণ করার সুযোগ পাব। এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। আমার ভাই আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। এ জন্য তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার কাছে এটা বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে বড় উপহার।

সামগ্রিকভাবে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, লালমনিরহাট-৩ আসনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে কেমন হয়েছে তা বলতে পারব না। আমি আমার নির্বাচনী এলাকা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে, আশপাশে তাকানোরও সুযোগ পাইনি। এমনকি খবরের কাগজ, টেলিভিশনের নিউজও দেখতে পারিনি। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলাম। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে যাবে কিনা? বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রেসিডিয়াম এবং নবনির্বাচিত এমপিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ আমরা শপথ নেব। শপথের পর জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে বিরোধী দলে যাব কিনা! বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন।

জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী করার জন্য আমাদের দল থেকে কাউকে পছন্দ করলে তিনি আমাদের দলের চেয়ারম্যানকে জানাবেন।

মহাজোটের বাইরে ১৫৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভোট করেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন কেন্দ্র থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। এ ছাড়া ভোটে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, এগুলো আমাদের কাছে খবর এসেছে। এ নিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। অনিয়ম হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে যেন কোনো অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পার্টির চেয়ারম্যানের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটামুটি ভালোই বলতে পারি। দেশে চিকিৎসাধীন আছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারও তাকে দেশের বাইরে যেতে হতে পারে।

মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে ২৪টি আসন দেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি? জবাবে জি এম কাদের বলেন, একেকজন একেকভাবে বলবে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে রিপোর্টের ভিত্তিতে যেসব আসনে যে দলের প্রার্থী ভালো রয়েছে তাকেই জোটগত প্রার্থী করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করেই নির্বাচন করা হয়েছে।

সরকারের শরিক হিসেবে অন্যান্য সুবিধা জাতীয় পার্টি চাইবে কিনা জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির মন্ত্রিত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অন্য যেসব সুবিধা থাকে সেগুলো পাওয়ার জন্য অনুরোধ করব। দলে যারা বঞ্চিত হয়েছেন, দলে যাদের প্রয়োজন তাদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তাদের বিষয়ে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা উপযুক্ত, তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর