শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলছে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি

তফসিল ফেব্রুয়ারির শুরুতে, নির্বাচন কমিশনের সামনে আরেক চ্যালেঞ্জ

গোলাম রাব্বানী

চলছে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি

একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট শেষে করেই পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতোই এবারেও ধাপে ধাপে নির্বাচন করার আলোচনা চলছে ইসিতে। দ্রুত নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বিগত সময় উপজেলা পরিষদে নির্দলীয় ভোট হলেও এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনেও লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষসহ অন্যান্য দলীয় প্রতীকের। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ নির্বাচন শেষ করেই উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান ইসির জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রায় ৪৯২ উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির সম্প্রতি নির্বাচন হয়েছে। তবে মার্চের মধ্যে যেগুলো নির্বাচন উপযোগী সেগুলোতে প্রথম ধাপে ভোট হবে। এ জন্য জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। তবে এবারে নির্বাচন কমিশন বড় আকারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২৬ ফেব্রয়ারির মধ্যে এবং ব্যবহারির পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চের মধ্যে শেষ হতে পারে। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে ইসি ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিল থেকে প্রত্যাহার পর্যন্ত ১৪/১৫ দিন সময় দেওয়া হতে পারে। আর প্রচারণার জন্য সময় থাকবে ১৪/১৬ দিন। সেই হিসেবে জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল হলে মার্চের ৩ অথবা ৭ তারিখে প্রথম ধাপের ভোট হবে। আর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় ধাপের তফসিল দিয়ে মার্চের মাঝামাঝিতে ভোট করার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে একই দিনে সারা দেশের ভোট করার প্রস্তাবও রাখবে ইসি সচিবালয়। এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল দিয়ে মার্চেই ভোট শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের ওপর। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটা করা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চে নির্বাচন করতে হলে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করতে হবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা আর এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা। তাই আমরা মার্চ মাসটাকে ধার্য করেছি উপজেলা নির্বাচন করার জন্য। কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেভাবে এগিয়ে যাব। আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই, ১৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয় ধাপে ওই নির্বাচনের ভোট হয়। সে সময় ছয় ধাপে ৪৮৭টিরও বেশি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল দেশের চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন। তবে গতবার নির্দলীয় ভোট হলেও এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে ওই সব উপজেলার নির্বাচন ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। জুলাইয়ের পরে যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর নির্বাচন পরে সুবিধাজনক সময়ে ঘোষণা করা হবে।

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ৪৬০টি উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ৪৭৫টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।

চলছে প্রস্তুতি, প্রস্তুত রয়েছে ব্যালট পেপারের কাগজও : ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন শেষ করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত রয়েছে। সংসদের ভোটের সঙ্গে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটা করেছে ইসি। উপজেলা নির্বাচনের মালামালের মধ্যে রয়েছে- ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট। এ জন্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাগজ কেনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর