সোমবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপি ও গণফোরামের কেউই শপথ নিচ্ছেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী কোনো সদস্যই এমপি হিসেবে শপথ নেবেন না। গতকাল দুপুরে ঐক্যফ্রন্টের এক বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে দুপুর ১২টার দিকে এই বৈঠক শুরু হয়। পরে বেলা পৌনে ১টার দিকে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানো হয়। এর আগে শনিবার ড. কামাল হোসেন তার দলে গণফোরামের বিজয়ী দুই সদস্যের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন। এর পরদিনই শপথ না নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত হলো। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তারা কেউই শপথ নেবেন না, এটা পরিষ্কার কথা। ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘শপথ নেওয়ার কোনো কথা কখনো হয়নি। শনিবার কিছু মিডিয়া ভুলভাবে এটার ব্যাখ্যা করেছে। ড. কামাল হোসেন কখনো বলেননি এই ধরনের কোনো কথা। আমাদের শপথ এখন নেওয়া হচ্ছে না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, গণফোরামের কোনো সদস্য শপথ নিচ্ছেন না।’ গণফোরামের অবস্থান স্পষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, ঐক্যফ্রন্টের কেউই শপথ নিচ্ছেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ছিল, আছে এবং থাকবে। ঐক্যফ্রন্ট জনগণের দাবি আদায়ে যে আন্দোলন করেছিল, সেই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামী বুধবার মিটিং আছে সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’ বৈঠক সূত্র জানায়, গণফোরামের দুই এমপি শপথ নিচ্ছেন, গণমাধ্যমে আসা এমন খবরে ড. কামাল হোসেনের কাছে জানতে চান ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। জবাবে তিনি বলেন, গণমাধ্যম ভুলভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছে। তিনি কখনই বলেননি, গণফোরামের দুজন শপথ নেবেন। এ সময় তিনি তার দলের বৈঠকের রেজুলেশনও পড়ে শোনান। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শিগগিরই ঢাকাসহ সারা দেশে গণসংযোগে নামবে। ঢাকায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জনসভাও করা হবে। ভোটে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করবে ঐক্যফ্রন্ট। শিগগিরই ফ্রন্টের আরেকটি বৈঠকে গণসংযোগের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, আলমগীর গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত  চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদ-উর রহমান, মোকাব্বের হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে ৫টি আসনে জিতেছে জোটের প্রধান শরিক বিএনপি ও দুটি আসনে জয়  পায় গণফোরামের দুই নেতা। ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ  মৌলভীবাজার-২ এবং মোকাব্বির খান সিলেট-২ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বিএনপির বিজয়ীরা হলেন, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হয়েছে। এ ছাড়াও বগুড়া-৭ আসনে একজন স্বতন্ত্র সদস্যকে সমর্থন দেয় তিনিও নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তিনি শপথ নিয়েছেন।

ড. কামাল কোনোভাবেই বলেননি এমপিরা শপথ নেবেন : গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ড. কামাল হোসেন কোনোভাবেই বলেননি গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা এমপি হিসেবে শপথ নেবেন। শনিবার বিকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ভিত্তিতে এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আশা করি এই প্রশ্নে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। দলের প্যাডে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শনিবার বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে এবং রবিবার ছাপা পত্রিকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

 আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনৈক্য নেই। বরং গত ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের পর জনগণের ভোটের অধিকার এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগের চাইতেও আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এখানে আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামের প্রহসনটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সেদিনই প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রহসনটি আবারও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে এই দেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর