সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কে পর্যাপ্ত ইউলুপের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

পাশাপাশি দরকার আন্ডারপাস ওভারপাস ফুটওভার ব্রিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বাচল ৩শ’ ফুট সড়কের স্বাভাবিক গতি বাড়াতে ইউলুপ, আন্ডারপাস, ওভারপাস নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি দুটি সার্ভিস রোডের আন্তঃসংযোগ বাস্তবমুখী করার পক্ষেও সংশ্লিষ্টরা মতপ্রকাশ করেছেন। আন্তঃসংযোগ না থাকায় মূল সড়ক এবং সার্ভিস রোডে যাতায়াতকারী গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকে।

দুই পাশের সার্ভিস রোডের সংযোগে ইউলুপ কিংবা আন্ডারপাস না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই ৩শ’ ফুট সড়কে যানজট কমিয়ে আন্তর্জাতিকমানের সড়ক গড়তে এবং ভবিষ্যতে যানজটমুক্ত করতে অন্তত ছয়টি স্থানে ইউলুপ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরবিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেকোনো প্রকল্প একবার সম্পন্ন করার পর আবার যদি সমস্যা নিরূপণ করে কাজ করা হয় সেটাকে জোড়াতালি দেওয়া বলে। আন্তর্জাতিকমানের সড়কে এর কোনো সুযোগ নেই। মহাসড়কের দুপাশে সার্ভিস রোড থাকলে সেটার সংযোগে ইউলুপ, ওভারপাস, আন্ডারপাস এবং পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজের ব্যবস্থা করতে হবে। এই রাস্তার পাশে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং বসতি গড়ে উঠেছে। সব মানুষের মতামত জরিপ করে ছয়টি বা আরও বেশি ইউলুপ, আন্ডারপাস এবং ফুটওভারব্রিজ তৈরি করতে হবে। এ সড়কে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত মাত্র তিনটি জায়গায় ইউটার্ন রয়েছে। কিন্তু দুই পাশের সার্ভিস রোডে যানবাহন চলাচলের কোনো সংযোগ নেই। তাই মূল সড়ক দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে সার্ভিস রোডে যেতে হচ্ছে। দূরপাল্লার যানবাহনের চাপে সার্ভিস রোডে যেতে আগ্রহী যানবাহনগুলো দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চনব্রিজ দিয়ে ভুলতা পর্যন্ত দূরপাল্লার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এ সড়কে। সিএনজি চালক সেলিম আলী বলেন, পূর্বাচল ৩শ’ ফুট রোডে অধিকাংশ গাড়িই ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলে। এখানে ইউলুপ বা আন্ডারপাস না থাকায় মূল সড়ক থেকে ইউটার্ন নিয়ে সার্ভিস রোডে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য পাশে গাড়ির ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে গিয়ে রাস্তার একপাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দুই পাশের সার্ভিস রোডের মধ্যে সংযোগের ব্যবস্থা থাকলে মহাসড়কে কোনো যানজটের সৃষ্টি হতো না। আমাদেরও জীবন হাতে নিয়ে ইউটার্ন নেওয়ার দরকার হতো না। রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প ঘিরে লাখো মানুষের বসতি গড়ে উঠছে। অসংখ্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীকে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অথচ দীর্ঘ এই সড়কটিতে নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। তাই মহাসড়কের দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে শিশু-কিশোররা। এ ব্যাপারে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, পূর্বাঞ্চলে ভবিষ্যতে পরিকল্পিত আবাসন এলাকা গড়ে উঠবে। এখন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ সেখানে বসবাস করছে। কিন্তু এরপরও ৩শ’ ফুট হয়ে পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার সড়কটিতে প্রাইভেট কার, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ও বাসের চাপে এখন মাত্রাতিরিক্ত যানজট তৈরি হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় এই যে, ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ আবাসন এলাকা তৈরি হলে সেখানে যখন মানুষ পুরোপুরিভাবে বসবাস শুরু করবে তখন যানজট আরও বৃদ্ধি পাবে। রামপুরা, বনশ্রী, হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসনে দুটি ইউলুপ নির্মাণ সফল ভূমিকা রেখেছে। এই ইউলুপ মডেল এখানেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে আশাকরি। স্থপতি মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, পূর্বাচল সড়কের যানজট নিরসনের কথা চিন্তা করে এখানে ইউলুপ, আন্ডারপাস, ওভারপাস এবং ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ পরিকল্পনায় নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা জনবসতির মানুষের মতামত নিয়ে দেশের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে। মহাসড়ক যানজটমুক্ত করতে ইউলুপ নির্মাণ একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ। দুপাশের সার্ভিস রোডের সঙ্গে সংযোগ ব্যবস্থা যানজট এবং দুর্ঘটনা দুটোই কমাবে।

সর্বশেষ খবর